ঢাকা,  মঙ্গলবার
০১ এপ্রিল ২০২৫

The Daily Messenger

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচন, মামলা বাণিজ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জামায়াত নেতার

আরিফ হাসান, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচন, মামলা বাণিজ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জামায়াত নেতার

ছবি : মেসেঞ্জার

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মো. দেলাওয়ার হোসেন বলেছেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের এলাকার একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। এক সময় তিনি মন্ত্রী ছিলেন। আমি তার ছাত্র হিসেবে তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। তবে তিনি ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের, আমরা ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে রাজনীতি করার। তাই ভোটের মাঠে সবাই নিজ নিজ দলকে জেতানোর চেষ্টা করবে, আর আমরা রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে আমাদের অবস্থান ধরে রাখব।”

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর মাদ্রাসা মাঠে জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আয়োজনে এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ ও প্রশাসনের ভূমিকা
ঠাকুরগাঁওয়ে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “আমরাও শুনেছি, এখানে নিরপরাধ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে থানায় নেওয়া হয়, পরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের, পুলিশ সুপার, ওসির সঙ্গে কথা বলেছি, আজ ডিসি সাহেবের সঙ্গেও কথা বলব। আমরা চাই, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক, কিন্তু নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”

তিনি আরও বলেন, “যারা দীর্ঘ ১৫ বছর মানুষকে নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে, ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেন মিথ্যা মামলার শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এই বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।”

নিরাপত্তা ও চাঁদাবাজি নির্মূলের প্রত্যয়
ঠাকুরগাঁওয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো নির্মূল করতে পারলে মানুষ স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে, চাকরি-বাকরির সুযোগ পাবে। একজন ব্যবসায়ী যদি চাঁদা ছাড়া ব্যবসা করতে পারে, একজন চাকরিপ্রার্থী যদি মেধার ভিত্তিতে ঘুষ ছাড়া চাকরি পায়, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।”

ঠাকুরগাঁও নিয়ে কি চিন্তা
তিনি আরও বলেন, “বেকারত্ব ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম বড় সমস্যা। আমরা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করতে চাই। পাশাপাশি সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদামুক্ত একটি সুন্দর ঠাকুরগাঁও গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।”

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা
ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “গত ১৫ বছরে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেককে বাসা থেকে বের হতেও দেওয়া হয়নি। এবার আমরা আশাবাদী, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই, জনগণ যেন ভয়ভীতির বাইরে থেকে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের আমিরে জামাত বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। তাই প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সেজন্য আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেব।”

ইফতার বিতরণ ও জনসেবামূলক কার্যক্রম
ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য ইফতার ও বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২০০টি পরিবারের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়। এছাড়া ১৬টি পরিবারের মাঝে ছাগল, ১টি পরিবারের মাঝে গরু, ৫টি পরিবারের মাঝে টিউবওয়েল এবং ৫টি মসজিদে মাসব্যাপী ইফতার আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জামায়াতের ইফতার প্যাকেজে ছিল
ইফতার প্যাকেজে প্রতিটি পরিবারকে ১৬ কেজি চাল, ৩ কেজি মসুর ডাল, ৩ কেজি ছোলা, ৫ কেজি আলু, ২ লিটার তেল ও ১ কেজি খেজুর দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার
জনসভায় বক্তারা বলেন, “আমরা চাই, ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ যেন নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারে। মানুষ যেন বাধাহীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির সুযোগ পায়। পাশাপাশি সবাই যেন ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”

নেতারা জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন এবং একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন প্রধান, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও সহকারী সেক্রেটারি কফিল উদ্দিন আহমেদ।

মেসেঞ্জার/তুষার