ঢাকা,  শনিবার
০১ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

ঐহিত্যবাহী জোড়গাছ হাট রক্ষায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঐহিত্যবাহী জোড়গাছ হাট রক্ষায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

ছবি : মেসেঞ্জার

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বহ্মপুত্র নদের পাড়ের ঐহিত্যবাহী জোড়গাছ হাট দুষ্টু চক্রের হাত থেকে বাঁচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীগণ। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হাটের কেনাবেচা বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চিলমারী বিজনেস ফোরামের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মাইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জোহা রাজু, জোড়গাছ বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সাজু মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মো. ফারুক মিয়াসহ অনেকে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে হাট ইজারাদার উপজেলার রমনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ফিরোজ মিয়ার নেতৃত্বে একটি অসাধু চক্র রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় সিন্ডিকেট করে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর যাবৎ জোড়জবরদস্তি করে হাটের ইজারা কয়েকগুণ বেশি নিয়ে আসতেছে। সরকার নির্ধারিত ইজারা মূল্যের চেয়েও চার পাঁচ গুণ বেশি খাজনা ও টোল আদায় করে আসছেন তারা। প্রতিবাদ করায় অনেক ব্যবসায়ী ভয়ভীতি দেখাসহ হয়রানি ও মারপিটের শিকার হয়েছেন। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ করেন মানববন্ধনকারীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, জোড়গাছ হাট নদের তীরে হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক‌য়েকশ ব্যবসায়ী এ বাজারে বেঁচাকেনা করতে আসেন। এখানে শত শত শ্রমিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে এ হাটের ইজারা নিতেন। অন্য কাউকে ইজারা নিতে দিতেন না। এ সুযোগে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকার নির্ধারিত খাজনা ও টোল নিয়ে নিজের বিশাল সম্পদ করেছেন। আবারও তিনি নানা কায়দায় ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চক্রটির নানা অনিয়মে ইতোমধ্যে জৌলুস হারিয়েছে জোড়গাছ হাটটি। দূর দূরান্তের ব্যবসায়ীরা অনেকে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেক শ্রমিক কর্ম হারিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন বলেও দা‌বি করেন ব‌্যবসায়ীরা।

চিলমারী বিজনেস ফোরামের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মাইদুল ইসলাম বলেন, হাটের অনিয়ম নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেওয়া হতো। অনেককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।

এ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা জানান, নদের কিনারে অবস্থিত হওয়ায় হাটটি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন সবাই। কয়েকদিন আগে পাশে ব্রহ্মপুত্রের নদে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চুরি ও ছিনতাই ঘটতে দেখা যায়। এই হাটে এক নৈশ্য প্রহরীকে হত্যা করে হাটের বেশ কয়েকটি দোকানের মূল্যবান মালামাল ও অর্থ ডাকাতি করে ডাকাত দল।

চিলমারী নদীবন্দরের কাছের হাটটি বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের অন্যতম ক্রয়-বিক্রয় স্থল হিসেবে পরিচিত দেশজুড়ে। আশপাশের চর অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এ হাটে ধান, পাট, বাদাম, ভুট্টা, সরিষা, চিনা, কাউন, ডাল, ও মসলা জাতীয় পণ‌্য বেঁচাকেনা করেন। গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয়ের হাট হিসেবে এ অঞ্চ‌লে জোড়গাছ হাটের ব‌্যাপক পরিচিতি র‌য়ে‌ছে। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা এরকম নানা কারণে আসতেছেন না। এসবের মূলে হাটের ইজারাদারকে দুষছেন সবাই। তার অনিয়ম দুর্নীতির কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।

চিলমারী বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জোহা রাজু বলেন, ইজারাদার ফিরোজ এখানে দুর্নীতির রাজ্য গড়ে তোলায় হাট প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের আমাদের আবেদন হাটটিতে আগের মতো প্রাণ ফেরাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন তারা।

এ সময় জোড়গাছ হাটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা হাটের ইজারা মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা, জোড়গাছ হাট ও ঘাটের নিরাপত্তায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শুস্ক মৌসুমে চর অঞ্চলে নৌকা চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে নদের নাব্যতা ঠিক রাখা, হাটের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি, হাটে সরকারি সহযোগীতায় নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ, রাস্তা সংস্কার প্রশস্তকরণ, গরু-ছাগলের হাট স্থানান্তর পণ্যের খাজনা ও টোল আদায়ে রশিদ সরবরাহসহ বেশ কয়েকটি দা‌বি তোলেন তারা।

হাট ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ মিয়া ব‌লেন, এসব অ‌ভিযোগ ভি‌ত্তিহীন। সরকা‌রি নিয়ম অনুযায়ী হা‌টের খাজনা নেওয়া হয়।

চিলমারী উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, তিন মাস আগে এ উপজেলায় এসে‌ছি এরকম অ‌ভিযোগ কেউ করে‌নি। তবে কেউ অ‌ভিযোগ দিলে বিষয়‌টি খ‌তিয়ে দেখা হবে।

মেসেঞ্জার/রাফি/তুষার

আরো পড়ুন