
ছবি : মেসেঞ্জার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় ব্রডব্যান্ড ইন্টানেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা, মারপিট ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুত্বর আহত একজন নারী ও শিশুসহ সাত জনকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এদের সবার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম হয়েছে বলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হায়দার জানিয়েছেন। এর আগে উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের পাকুরদাড়িয়া গ্রামের মোড়ে এ হামলা-মারপিট ও দোকান ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বর আহতরা হলেন, নওগাঁ জেলার নগর কুসুুম্বী গ্রামের শাকিল আহাম্মেদ (৩০), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চিয়ারিগ্রামের মোছা. রোজিনা (৪৮), তিলকপুর বাজারের বেলাল হোসেন (৩৫), রাকিব হোসেন (২২), মো. বিশাল (২৯), কাশিড়া গ্রামের নুহু (৭) ও রাজু আহাম্মেদ (২৮)। এর মধ্যে মো. বিশাল তিলকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও রাজু আহাম্মেদ রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিলকপুর বাজারের তিলকপুর নেটওর্য়াক নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন নিয়ে পাকুরদাড়িয়া গ্রামেে গ্রাহকদের সংযোগ দিয়েছিলেন ওই গ্রামের সাদ্দাম হোসেন। সম্প্রতি তিলকপুর নেটওয়ার্কের মালিক বেলাল হোসেন ও সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে।
এ ঘটনার পর সাদ্দাম হোসেন গোপনে রাজশাহীর একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন সংযোগ টানেন। ওই ব্রডব্যান্ডের লাইন আক্কেলপুর উপজেলায় সংযোগের অনুমতি ছিল না। তিলকপুর নেটওয়ার্কের মালিক ঘটনাটি জানতে পারেন। তিনি সাদ্দাম হোসেনকে বাদ দিয়ে নিজের লোকজন দিয়ে পাকুরদাড়িয়া গ্রামে ইন্টারনেটের সংযোগ দেওয়ার জন্য তার টানছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার টানার সময় সাদ্দাম হোসেন বেলাল হোসেনের লোকজনদের বাধা দেন। ওইদিন বিকেলে বেলাল হোসেন চন্দরদীঘি বাজারে এসে সাদ্দামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বেঠকের পর সাদ্দাম হোসেন বেলাল হোসেনকে মারতে উদ্যত হন।
এ খবর পেয়ে বেলালের লোকজন ৮-১০ টি মোটরসাইকেল নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় বেলালের হোসেন চন্দনদীঘি বাজারে আসেন। তারা সাদ্দাম হোসেন ও তার লোকজনদের খোঁজাখুজি শুরু করেন। তাদের না পেয়ে পাকুরদাড়িয়া গ্রামের তিন মাথা মোড়ে যান তারা। সেখানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নিয়ে হামলা, মারপিট ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। এতে পাকুরদাড়িয়া গ্রামবাসীসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুরুত্বর জখম হওয়া সাত জনকে রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আনা হয়।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হায়দার বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে আহত সাত জনকে রাতে জরুরি বিভাগে আনা হয়। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম ছিল।
আহত রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রাজু আহম্মেদ বলেন, আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পাকুরদাড়িয়া মোড়ে কাজ করছিলাম। আমার সামনে মোড়ের একটি দোকানে কয়েক জন ক্যারামবোর্ড খেলছিলেন।
এসময় ৮-১০ টি মোটরসাইকেলো তিলকপুর বাজারের ১৫-২০ জন ব্যক্তি এসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করে দোকান ভাঙচুর করেন। আমরা এগিয়ে গেলে তারা আমাদের মারধর করেন। এতে আমাদের ৬-৭ জন আহত হন।
তিলকপুর নেটওয়ার্কের মালিক বেলালের চাচাতো ভাই সাব্বির হোসেন বলেন, আমরা চন্দনদীঘি বাজারে বৈঠক শেষ করার পর সাদ্দাম হোসেন আমার চাচাতো ভাই বেলাল হোসেন মারধর করতে উদ্যত হন। এ ঘটনার পর আমরা সন্ধ্যায় চন্দনদীঘি বাজারে এসেছিলাম। সেখান থেকে তিলকপুর ফেরার পথে পাকুরদাড়িয়া গ্রামের মোড়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এতে তিলকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি বিশাল, তিলকপুর নেটওয়ার্কের মালিক বেলাল হোসেনসহ ৫ জন আহত হন।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এ বিষয়ে বেলাল হোসেনের বড় ভাই আজ বুধবার বিকেলে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেসেঞ্জার/রমি/তুষার