ঢাকা,  রোববার
০২ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

রাজশাহীর পবায় রিকশাচালককে সমাজসেবা কর্মকর্তার জুতা ও লাঠি পেটার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ১ মার্চ ২০২৫

রাজশাহীর পবায় রিকশাচালককে সমাজসেবা কর্মকর্তার জুতা ও লাঠি পেটার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল

ক্যাপশন : সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল।

রাজশাহীর পবায় এক ব্যাটারীচালিত রিকশাচালককে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের জুতা ও লাঠি পেটার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরের ঘটনাটি শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, “তুমি একবার বলছো না, আবার বলছো ক্যান। শালারে মাইরাল্যামু, আগা আগা।” এই কথা বলতে বলতে রিকশা চালককে প্রথমে জুতা এবং পরে নিজের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার থেকে মোটা লাঠি নিয়ে রিকশাচালককে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায় পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলকে।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সমাজসেবা কর্মকর্তা রিকশা চালককে ভাড়া দিয়ে রিকশা থেকে নেমে যান। কিছুক্ষণ পরে ভাড়া নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলে তিনি রিকশার দিকে গিয়ে পা থেকে জুতা খুলে রিকশা চালকের মুখে ও মাথায় আঘাত করেন। এরপর পাশে থাকা নিজের প্রাইভেটকার থেকে মোটা লাঠি বের করে রিকশা চালককে বেধড়ক পেটাতে থাকেন এবং রিকশা চালককে চলে যেতে বলেন।

জানা গেছে, জাহিদ হাসান রাসেল পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ ছিলো। কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া প্রাইভেট কারে অফিসে যাওয়া করতেন এবং সেই গাড়িতে ‘বিচারক’ লিখা স্টিকার ব্যবহার করতেন। জানা গেছে সেই কারটি বিচারকের স্ত্রীর।

এ বিষয়ে উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা ঘটনা সত্য বলে জানান। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলের স্ত্রী রাজশাহী কোর্টের একজন বিচারক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি রাজশাহী থেকে ঢাকায় বদলী হয়েছেন।

সেই সূত্রে রাসেল সাহেব নিজেকে অনেক ক্ষমতাবান ভাবতেন। তিনি কোন কিছুকেই পরোয়া করতেন না। তিনি রিকশা চালককে মারধর করলেন, কোন ক্ষমতা বলে? বউ ম্যাজিস্ট্রেট এই জন্য তার এত ক্ষমতা?

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ বলেন,“আমি জুম্মার নামাজ শেষে বাসায় ফিরে এই ঘটনার শুনেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা হয়ে এধরণের কাজ তার শোভা পায় না।”

সমাজসেবা কর্মকর্তার ‘বিচারক’ লিখা গাড়িতে চলাফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি তো এই উপজেলায় নতুন এসেসছি। তবে শুনেছি, উনার মিসেস জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট। বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত অবগত নই।”

পবা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের মানসিক অত্যাচার ও দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যত্র বদলী নিয়ে গেছে অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, তার অধীনে আমাদের কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভাষা খারাপ করে কথা বলেন।

ভাতাভোগীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি নিজের নিয়মে অফিস পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ। এমন অফিসার থাকলে গরিব অসহায় মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বড়গাছী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় পাঁচজনকে নোটিশ করেছিলেন এবং খোদ পবা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহায়ক হাসানুর রহমানকে অযথা নোটিশ করে ভয় দেখায়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অফিসার জাহিদ হাসান রাসেল বলেন, ‘রিকশাচালক বেয়াদবিমূলক কথা বার্তা বলায় আমার রাগ হয়েছিল। তবে আমার অবস্থান অনুযায়ী এমন কাজ করা উচিত হয়নি। আমি খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত।’

সমাজসেবা অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার উপপরিচালক মনিরা খাতুন বলেন, ‘ভিডিওটা দেখলাম। বিষয়টা নিয়ে জাহিদ হাসানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমাদের বিভাগীয় পরিচালক রয়েছেন। আলাপ করে দেখি।’

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার

আরো পড়ুন