ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৬ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

চিলমারীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ৬ মার্চ ২০২৫

চিলমারীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি : মেসেঞ্জার

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জনস্বাস্থ্য বিভাগের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে। মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম-নীতি। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ পড়ে থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছে সুবিধাভোগী সাধারণ জনগণ।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানা গেছে, মানব সম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য বিধি প্রকল্প ২০২২-২৩ এর আওতায় কমিউনিটি বেজ (৪০পরিবার) গভীর নলকুপের মাধ্যমে নিবাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৩৫টি কাজ, কমিউনিটি বেজ লার্জ স্কিম (৩৫০-৪০০ পরিবার) ২টি কাজ, স্বাস্থ্য বিধি হাত ধোয়ার বেসিন নির্মাণ ৯টি কাজ, সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ (১০পরিবার) প্রকল্পের ৪২টি কাজ ও ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

এর মধ্যে কমিউনিটি বেজ (৪০পরিবার) গভীর নলকুপের মাধ্যমে নিবাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রতিটির ব্যয় ৮লক্ষ ৫০হাজার টাকা, কমিউনিটি বেজ লার্জ স্কিম (৩৫০-৪০০পরিবার) প্রকল্পের প্রতিটির ব্যয় ১ কোটি ২৫লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য বিধি হাত ধোয়ার বেসিন নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিটির ব্যয় ৩ লক্ষ ৭৫হাজার টাকা ও সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ (১০পরিবার) প্রকল্পের প্রতিটির ব্যয় ৬লক্ষ ৫০হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন যোগ্য। প্রকল্পের প্রতিটি কাজের জন্য সুবিধাভোগী সকল সদস্য মিলে সরকারী কোষাগারে ১০হাজার টাকা জামানত রাখার কথা।

৪০পরিবারের জন্য ৩৫টি কাজ এবং ৪০০পরিবারের ১টি কাজ পান গোপালগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস মনির ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কামাল শিকদার বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন এবং অন্যান্য কাজগুলি করছেন কুড়িগ্রামস্থ ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম।

সরেজমিনে উপজেলার শরীফেরহাট এলাকার চান মিয়ার বাড়ীতে কমিউনিটি বেজ (৪০পরিবার) গভীর নলকুপের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় একটি কাজ চলছে প্রায় ২বছর ধরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রকল্পের জন্য সরকারী কোষাগারে ১০হাজার টাকা জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও ৪০পরিবারের প্রত্যেকের নিকট থেকে ১হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে।

ওই প্রকল্পের একজন সুবিধাভোগী জানান, অনেকদিন হলো পানি সাপ্লাইয়ের জন্য ১হাজার টাকা দিয়েছি,কিন্তু তার কাজতো শেষ হচ্ছে না।পুটিমারী কাজলডাঙা এলাকার জেলে পল্লীতে একই প্রকল্পের আওতায় একটি কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে।

সেখানে জেলে মিলন চন্দ্র জানান, পানি সাপ্লাইয়ের জন্য ৪০পরিবারের প্রত্যেকের নিকট থেকে ২-৩হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্পের যোগাযোগকারী জেলে রাম চন্দ্র দাস বলেন, দেড় বছরের বেশী সময় ধরে পানির কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ অনুমদন নিতে ২৫হাজার টাকা এবং কাজের জন্য সরকারী কোষাগারে ১০হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের পিছনে ৫০হাজার টাকার উপরে খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সরকারী গ্রাম এলাকার আয়নাল হক মেম্বার বলেন, বিশুদ্ধ পানির জন্য ৪০ পরিবারের একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম প্রায় ২বছর আগে, এখন এটি নিয়ে মহা বিপদে আছি। রমনা ঘাট এলাকার মোস্তাকিনের বাড়ীতে ১০পরিবারের একটি প্রকল্পে পানি শুধুমাত্র মোস্তাকিনের বাসায় ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদের জন্য নির্মিত লাইন সবগুলি বন্ধ।

১০পরিবার এবং ৪০ পরিবারের জন্য সরকারী বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে নিরাপদ পানি ব্যবহারের উদ্যোগ নিলেও সংশ্লিষ্টরা উৎকোচের বিনিময়ে ওইসব প্রকল্পের এক-দুইটি সংযোগ ব্যবহার করতে সহায়তা করছে বলে অনেকের অভিযোগ। ১০পরিবার মিলে একটি প্রকল্প দেয়ার নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় ৩০-৪০ফুট জায়গার ব্যবধানে পাশ্বাপাশ্বি দুটি প্রকল্পও দেখা গেছে। উৎকোচের বিনিময়ে বাড়ী-বাড়ী এমন প্রকল্প দেয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও প্রকল্পসমূহের কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলে জানা যায়।

রমনা সোনারীপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, প্রায় ২বছর হলো জামানতের টাকা জমা দিয়েছি, আজ-কাল করে কাজ শেষ হচ্ছে না। এছাড়াও উপজেলায় মোট ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণের কাজ অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

উপজেলার নবেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুকুন্জ্জুামান এ প্রতিনিধিকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে। নির্মাণ সামগ্রী যত্রতত্র পড়ে থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত বিপদের সমুখ্খিন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এমএস মনির ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শুভ মিয়া বলেন, আমাদের কাজ প্রায় শেষ, সামান্য কিছু কাজ বাদ রয়েছে। আগামী ১মাসের মধ্যে শেষ হবে। ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম মাষ্টারের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার সিংহ জানান, কমিউনিটি বেজ (৪০পরিবার) গভীর নলকুপের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি হস্থান্তর হয়েছে,বাকী ৩৩টির কাজ আগামী ১মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। ওয়াশব্লকের কাজ চলামান রয়েছে।

মেসেঞ্জার/রাফি/তুষার

আরো পড়ুন