
ছবি : মেসেঞ্জার
চিকিৎসকদের সংগঠন 'ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ' (ড্যাব) যশোর জেলা শাখা ও মেডিকেল কলেজ (যমেক) শাখার কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এক পক্ষের অভিযোগ ৫ আগস্টের পর কতিপর চিকিৎসক ভোল পাল্টেছেন। ভুয়া কমিটি গঠন করে নিজেদের নেতা হিসেবে জাহির করছেন। স্বৈরাচার সরকারের আমলে ত্যাগী ও নিষ্পেষিত চিকিৎসকদের দাবি গণতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হোক। অপর পক্ষ বলছেন, দুটি কমিটির তালিকা তারা পেয়েছেন। এখন সেটা ড্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১০ সালে ডা. এস এম আবু আহসান লাল্টুকে সভাপতি ও ডা. এমদাদুল হককে সম্পাদক করে ড্যাব যশোর জেলা শাখার কমিটি গঠন হয়। ২০১৯ সালে ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কমিটি ভেঙে দেন। পরে নতুন কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হলেও অনুমোদন দেয়া হয়নি। আবার তালিকা প্রত্যাক্ষানও করা হয়নি। ফলে এস এম আবু আহসান লাল্টুর নেতৃত্বে ড্যাবের কার্যক্রম চলে আসছিলো। ৫ আগস্টের পর অনেকে ভোল পাল্টে ড্যাবের নেতৃত্বে আসার জোর চেষ্টা করছেন। যা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে নিয়ে বিষোদগার করছে। এই অবস্থার মধ্যে ড্যাব জেলা শাখা ও যমেক শাখার আহবায়ক কমিটির তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. আব্দুস সালামের স্বাক্ষরিত যশোর জেলা আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন আহ্বায়ক ডা. এস.এম আবু আহসান লাল্টু, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. রাশেদ রেজা ডা. ফারুক এহতেশাম আল পরাগ, ডা. মাজহারুল ইসলাম, সদস্য সচিব ডা. রবিউল ইসলাম তুহিন, কোষাধ্যক্ষ ডা. এ.এস. গাজী শরিফউদ্দিন আহমেদ, সদস্য ডা. মনিরুজ্জামান, ডা. তমিজ উদ্দিন শেখ, ডা. আহসান কবীর বাপ্পি, ডা. তাহমিদ উর রহমান, ডা. শেখ আতাহার হোসেন তুর্য।
এছাড়া যশোর মেডিকেল কলেজ আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় রয়েছেন আহ্বায়ক ডা. একেএম মেজবাহ উর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. শরিফুল ইসলাম খান ডা. আহমেদ ফেরদৌস জাহাঙ্গীর, ডা. এসএম নাজমুল হক, সদস্য সচিব ডাঃ ওবায়দুল কাদির উজ্জ্বল, কোষাধ্যক্ষ ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন, সদস্য ডা. এ.বি.এম দেলোয়ার হোসেন, ডা. ওয়াহিদুজ্জামান. ডা. এসএম মাশফিকুর রহমান। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটি পক্ষ এটিকে ভুয়া কমিটি আখ্যায়িত করেছেন।
ড্যাব যশোর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি এস এম আবু আহসান লাল্টু জানান, যাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশ করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো কমিটির তালিকায়। স্বৈরাচার সরকারের আমলে ডা. শরিফুল আলম খান, ডা. নাজমুল হক, ডা. রবিউল ইসলাম তুহিনসহ অনেকে স্বাচিপ নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন। তারা এখন ড্যাবের নেতা হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ড্যাবের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন ছাড়া কিভাবে যমেক শাখার কমিটি গঠন হল এটা বোধগম্য নয়। মূলধারার চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা না হলে তা প্রত্যাক্ষাণ করা হবে।
ডা. এহেতেশাম পরাগ জানান, আওয়ামী লীগ শাসনামলে জোর করলেও নেতা হতে চাননি। ড্যাবের কোন প্রোগামে আসেননি। এমন কয়েকজন চিকিৎসক এখন ড্যাবের বড় নেতা হতে চাইছেন। নিজেরা মনগড়া কমিটি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানান দিয়েছেন। অথচ ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ যশোরে কোন কমিটির অনুমোদন দেননি। অসাধু কয়েকজন সুবিধাবাদী চিকিৎসক স্বার্থ হাসিলের জন্য ভুয়া কমিটি তৈরি করেছেন। যা সংবাদ সম্মেলন করে ভুয়া কমিটি প্রত্যাক্ষান করা হয়েছে।
তাদের এমন কর্মকান্ডে যশোর ড্যাবের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে যেসব চিকিৎসক ড্যাবকে চাঙ্গা রেখেছিলেন। যারা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এমন ত্যাগী ও নিষ্পেষিতদের নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে। কারও পকেট কমিটি মানবেন না যশোরের জাতীয়তাবাদী আদর্শের চিকিৎসকরা। ডা. এহতেশাম পরাগ আরও জানান, সুবিধাবাদী চক্র নিজেদের পাল্লা ভারি করার জন্য ৪৯ জন চিকিৎসককে ড্যাবের সদস্য করেছেন। যাদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিত চিকিৎসক। তালিকা দেখতে চাইলেও গোমর ফাঁসের ভয়ে তারা দেখাচ্ছেন না।
আহবায়ক কমিটি গঠনের বিষয়ে ডা. শরিফুল ইসলাম খান ও ডা. নাজমুল হকের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে ডা. মেজবাউর রহমান জানিয়েছেন, দুটি কমিটির তালিকা তারা পেয়েছেন। একটি কমিটিতে তাকে আহবায়ক করা হয়েছে। কমিটির তালিকা ড্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হলেই নিশ্চিত হবেন। কমিটির তালিকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষর থাকলেও একটি পক্ষ কমিটি মানতে চাইছেন না। সময় আসলে সব কিছু জানানো হবে।
যারা আওয়ামী লীগ চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপ নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন এমন সুবিধাবাদীদের বয়কট করা উচিত। পরীক্ষীত চিকিৎসক এহেতেশাম পরাগসহ মূলধারার চিকিৎসকদের নিয়ে ড্যাবের কমিটি গঠনের আহবান জানানো হয়।
এদিকে, ৩ মার্চ ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, অতি সম্প্রতি যশোরের ড্যাবের একটি কমিটি গঠন হয়েছে, এমন একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের অভিভাবক ড্যাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এবং ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান -এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, এখনও পর্যন্ত কোন কমিটি ঘোষণা হয়নি। কিন্তু গুঞ্জনে উঠে আসা কতিপয় নাম নিয়ে যশোরে বিএনপির বিভিন্ন মহল এবং জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকদের বিভিন্ন মহলে এটি নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হলে, কেন্দ্রীয় ড্যাবের নেতৃত্বকে যেনো কেউ ভুল বুঝতে না পারে এবং কেন্দ্রীয় ড্যাবের প্রতি যেন কারোর আস্থার ঘাটতি না হয়, সেই লক্ষে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কেন্দ্রের অবস্থান পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি যে যশোরে ড্যাবের কোন কমিটি এখন পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি এবং ৫ আগস্টের পরে যারা জাতীয়তাবাদী চিকিৎসক রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আনবার ব্যাপারে আমাদের বিন্দুমাত্র কোন ইচ্ছা নেই।
এ ব্যাপারে আমাদের অভিভাবক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও হারুন আল রশিদ এবং আমার ভাই যশোরের কৃতি সন্তান ডা. মেহেদী হাসানের সাথে যশোরে বিএনপির অভিভাবক হিসাবে পরিচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর জেলা বিএনপি আমাদের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
মেসেঞ্জার/তুষার