
ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকার সাভারে কর্মরত জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ভাইকে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। নিজ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ও হত্যার হুমকি পেয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী সাঈদ উদ্দিন সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
গত পহেলা মার্চ সাভার মডেল থানায় সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে জিডিটি দায়ের করেন সাঈদ উদ্দিন। তিনি সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিনের আপন ছোট ভাই ও সাভার পৌরসভার দিলখুশাবাগ মহল্লার মৃত আলী মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস ছামাদ মল্লিক।
এ বিষয়ে সাঈদ উদ্দিন বলেন, আমরা ৩ ভাই ৩ বোন, আমার বাবা সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৩৭ দিলখুশাবাগ এলাকায় ৪ শতাংশ জমির উপর একটি ৪ তলা বিল্ডিং নির্মাণ করে মৃত্যুবরণ করেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর বাবা এবং মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে আমরা মালিক হই। আমরা ছয় ভাই বোন মিলে মৌখিক বন্টন অনুযায়ী প্রত্যেকের হিস্যা অনুযায়ী ভোগ দখল করে আসছি।
প্রত্যেক মাসে ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ অন্য সবার মত আমি ৩৯ হাজার টাকা পাই। কিছুদিন যাবত সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিন সেই ভাড়ার টাকা আটকে রেখেছেন। গত পহেলা মার্চ বিকাল অনুমান সাড়ে ৫ টায় এর কারণ জানতে গেলে আমার মেজ ভাই হাফিজ উদ্দিনসহ সন্ত্রাসী প্রকৃতির অজ্ঞাত নামা ২/৩ জন ব্যক্তি এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন আমি তাদের এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতিসহ প্রাণে মারার হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী সাঈদ উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে জিডিতে উল্লেখ করেন, সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিন যেকোনো সময় ফ্ল্যাট দখল করে আত্মসাৎ করাসহ তার জানমালের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। মেজো ভাই হাফিজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের ভয়ে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সাঈদ উদ্দিন বলেন, বাধ্য হয়েই সাভার মডেল থানায় জিডি দায়ের করেছি, প্রতিকার না পেলে আদালতে মামলা করবো। এর আগে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার কর্মস্থল মানবজমিন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ১১ টি দপ্তরে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
অভিযোগে সাঈদ উল্লেখ করেন, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আমার ভাই হাফিজ উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিও পার হয়নি। অর্থাৎ তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তিনি দুর্দান্ত চালাক প্রকৃতির লোক। যা তদন্ত করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।
তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হুবহু অন্য এক ব্যক্তির সনদ কৌশলে সংগ্রহ করে তথ্যপ্রযুক্তি যখন এনালগ ছিল ঠিক তৎকালীন সময় সেই শিক্ষা সনদ তার বলে চালিয়ে দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিত বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত শীর্ষ সংবাদ প্রতিষ্ঠান দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাভার প্রতিনিধির চাকরি প্রতারণার মাধ্যমে বাগিয়ে নেয়। ফলে তার শক্তি আরও দিন দিন বৃদ্ধি পায়। এবং কি ভয়ঙ্কর তথ্য হলো যে, তিনি নিজে কোন সংবাদ সংগ্রহ না করে পরনির্ভর কাট-কপি, পেস্ট করে দৈনিক মানবজমিনে সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মানুষকে নানাভাবে সংবাদপ্রকাশের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ কৌশলে হাতিয়ে নেয়। অন্যান্য লোকজনদের মত আমাদের নিজ পরিবারের সদস্যরাও আমার ভাই হাফিজ উদ্দিনের জুলুম ও নির্যাতনের শিকার।
অভিযোগ পত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, সাভার মডেল থানাধীন টাট্টি মৌজায় বিআরএস ২৩০ নং খতিয়ানে ১৩৭/২৮৫ নং দাগে খরিদ সূত্রে ৪ শতাংশের মালিক হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় আমার বাবা আলী মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুকালে আমার বড় ভাই মো. খলিল মিয়া, মেজো ভাই মো. হাফিজ উদ্দিন, আমি মো. সাইদ উদ্দিন, আমার বোন আমেনা বেগম, সাফিয়া বেগম, রেজিয়া বেগম এবং আমার মা জোবেদা খাতুনকে ওয়ারিশ হিসেবে রেখে যান এবং প্রত্যেকে আমরা উক্ত সম্পত্তির মালিক হই।
একই মৌজায় ৯৮ নং খতিয়ানে বিআরএস ১৩৭/২৮৫ নং দাগে ৪.৫০ শতাংশ সম্পত্তি আমার মা জোবেদা খাতুন তার জীবদ্দশায় খরিদ সূত্রে মালিক হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ পূর্বক দখলে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে আমরা উপরে বর্ণিত তিন ভাই এবং তিন বোন উক্ত সম্পত্তির সঠিক হিস্যা অনুযায়ী উক্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে ভোগদখলে থাকাকালীন আমার ভাই হাফিজ উদ্দিন আমাদের প্রাপ্য সম্পত্তি হতে আমাদেরকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে আমার বাবার নামে খরিদকৃত সম্পত্তি নিজে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে আমাদের ভাই-বোন ও ওয়ারিশদের নাম আড়াল করে প্রতারণার মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করে আমার বাবার ক্রয়কৃত সম্পত্তি টিকে না মর্মে আমার বাবার দলিল দাতার পরবর্তী ওয়ারিশদের নিকট থেকে একটি দলিল নং- ১৯৩৪৯ মূলে ২ শতাংশ সম্পত্তি লিখে নেন।
কিন্তু আমার ভাই হাফিজ উদ্দিন ৪ শতাংশ সম্পত্তি নিজের কব্জায় রেখে গ্রাস করেন। বেশ কিছুদিন পূর্ব হতে আমি আমার ওয়ারিশি সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বললে আমিসহ আমার স্ত্রী হোসনেয়ারা আক্তার পলির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাই হাফিজ উদ্দিন মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে এবং মানবজমিন পত্রিকার ক্ষমতা ব্যবহার করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করবে বলে হুমকি দেয়।
অভিযোগ পত্রে আমার ভাই হাফিজ উদ্দিনের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে আমরা শঙ্কিত এবং তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি মর্মে হাফিজ উদ্দিনকে নির্যাতনকারী, ভূমিদস্যু ও প্রতারক উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ মানবজমিন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের প্রার্থনা করেন ভুক্তভোগী সাঈদ উদ্দিন।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস ছামাদ মল্লিক বলেন, সাঈদ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জিডি করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেসেঞ্জার/নোমান/তুষার