
ছবি : মেসেঞ্জার
বুধবার (১২ মার্চ) সকাল সোয়া এগারোটা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের চর্ম বিভাগের টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হয় গৃহবধূ মনোয়ারার সাথে। আট বছরের শিশুসন্তান সাব্বিরকে নিয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার সালটি গোপালপুর থেকে এসেছেন তিনি। সকাল আটটা থেকে অপেক্ষা করছেন টিকেটের জন্য। কিন্তু পাচ্ছেন না। না আছে টিকেট কাউন্টারের লোক, না আছে চিকিৎসক। ক্ষুব্ধকণ্ঠ তার।
বললেন, এভাবে রোগীদের জিম্মি করে কিভাবে দাবি আদায় করা যায়। এর খানিকটা পরে মেডিসিন কাউন্টারের সামনে কথা হয় নগরীর পরশুরাম থেকে আসা মানোয়ার হোসেনের সাথে। জানালেন, বয়োবৃদ্ধ মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু পাচ্ছেন না ডাক্তার। এমার্জেন্সিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বলা হয়েছে তাদের কিছুই করার নেই।
এই দৃশ্য সকাল আটটা থেকে ছিল রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোর বিভাগের। সব টিকিট কাউন্টার বন্ধ। নেই চিকিৎসক। কর্মবিরতি করায় সকাল থেকেই আউটডোরে টিকিট বেচা বিক্রি এবং ওষুধ দেয়া কার্যক্রম বন্ধ আছে। সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। আউটডোড়ের সামনে অসংখ্য রোগীর ভীড়। কিন্তু টিকিট দেয়া হচ্ছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীরা।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে আসা গোলাম মোস্তফা নামের এক রোগী জানালেন, দুইদিন থেকে ভোরে তিনি আসছেন হাসপাতালে। কিন্তু পাচ্ছেন না টিকেট। দেখাতে পারছেন না চিকিৎসককে। বাহিরে চিকিৎসক দেখাবেন সেই সামর্থ্য নাই তার।
এমবিএস-বিডিএস ব্যতিত কেউ ডাক্টার লিখতে পারবে না এবং ম্যাটস শিক্ষার্থীদের স্যাকমো পদবী রহিতসহ ৫ দফা দাবিতে চিকিৎসকরা কর্ম বিরতি করায় বন্ধ হয়ে আছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটডোর সেবা।
আন্দোলনকারী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ডাক্তার মাহফুজুর রহমান জানান, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে গেলেও সতের ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে আছে। কিন্তু সরকার আমাদের গা করছে না। তার যুক্তি ম্যাটস শিক্ষার্থীরা এইচএসি পড়ে না। ৪ বছরের একটা ডিপ্লোমা করে। কিন্তু তারা ডাক্টার হতে চায়। এটি ঠিক নয়। ওদের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা ধংস হয়ে যাচ্ছে। ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। মেডেকিলে শিক্ষার্থীরা ৫ বছর পড়ে ইন্টার্নি করে চিকিৎসক হয়, আর তারা শাহবাগে আন্দোলন করে চিকিৎসক হতে চায়। এটা অনৈতিক ও অযৗক্তিক।
আন্দোলনকারী রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টারনি চিকিৎসক ডাক্তার রশিদ সাবাব নাসির জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস বর্জন এবং কাজে যোগ না দেয়া অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আমরা ইনডোর বন্ধ করে দেব।
এদিকে দাবি আদায় বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়কে গিয়ে অবরোধ গড়ে তোলে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এই ঘটনার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আউটডোরে বন্ধ থাকলেও ইনডোরের সমস্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
মেসেঞ্জার/তুষার