
ক্যাপশন : রাজশাহী শহরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দ্বারা রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের শতাধিক বৃক্ষ নির্বিচারে হত্যা ও পুকুর ভরাট এবং বাগমারায় জোর জবরদস্তিমূলক পুকুর খননের প্রতিবাদে বুধবার (১২ মার্চ) রাজশাহী ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় -টিডিএম।
রাজশাহী শহরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দ্বারা রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের শতাধিক বৃক্ষ নির্বিচারে হত্যা ও পুকুর ভরাট এবং বাগমারায় জোর জবরদস্তিমূলক পুকুর খননের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১২ মার্চ) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুপুর ১২টায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন জুলাই-৩৬ পরিষদ, বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ-যুবদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি রাজশাহী মহানগর এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করে। জুলাই-৩৬ পরিষদের মূখ্য সংগঠক ফয়সাল আহমেদ এর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও পুকুর ভরাটের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। গত বছরের নভেম্বরে লিজ নিয়ে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রায় তিন শতাধিক বৃক্ষ নিধন করেছে এবং টেক্সটাইল মিলের ভেতরে অবস্থিত পুকুর ভরাট করেছে।
যদিও গত ২৮ জানুয়ারি এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে উচ্চ আদালত গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছেন। কিন্তু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হাইকোর্টের আদেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করেছেন। কিন্তু সেখানের গাছগুলো রক্ষায় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
অন্যদিকে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পুকুর খনন চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের খোর্দ্দকৌর মৌজার নিমাই বিল। সেখানে কৃষি জমিতে রাতের অন্ধকারে পুকুর কাটছে স্থনীয় ভূমিদস্যুরা। তারা রীতিমতো ওই এলাকার বহু মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। কৃষকের ধান খেত নষ্ট করেছে।
এক/দেড় মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারতো কৃষকেরা অথচ, তাদের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে রাতের আধাঁরে জমিতে স্কেভেটর মেশিন নামিয়ে সেই ধানক্ষেত নষ্ট করেছে। প্রতিবাদ করায় তারা জমির মালিকদের প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি তাদের ফসলের সেচের পানি বন্ধ করে দেন।
থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানার ওসি উল্টো ফ্যাসিস্টদের সহযোগী তকমা লাগিয়ে ভুক্তভোগী এক নারীকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান এবং তাদের দায়ের করা মামলা নিতে আপত্তি জানান। সেখানকার কৃষি জমির মালিকরা নিজ বাড়ি ছেড়ে গ্রাম ছাড়া ও আতংকিত।
মাববন্ধনে বক্তব্য দেন, জুলাই-৩৬ পরিষদের উপদেষ্টা এডভোকেট তৌফিক পারভেজ জাহেদী, আইনজীবী হোসেন আলী পিয়ারা, জুলাই-৩৬ পরিষদের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল, পারিবেশ আইন গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম, সবুজ সংহতি রাজশাহীর সদস্য সচিব মো. নাজমুল হোসেন রাজু, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ভুক্তভোগী ঈশিতা ইয়াসমিন ও মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে ১০ দফা দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতারের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ করপোরেশন এর চেয়ারম্যান ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মহিনুল হাসান।
স্মারকলিপির দাবিতে রয়েছে- কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ এবং চিহ্নিত ভূমি দস্যুদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত; ভূমি দস্যুতায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; বিএমডিএ;র সেচের পানি বন্ধের হুমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি ও সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত; রাজশাহী টেক্সটাইলস মিলের গাছ কাটা ও পুকুর ভরাট বন্ধ করতে হবে; ভরাট পুকুর পুনরুদ্ধার ও পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে হবে এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণসহ ৫ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং প্রাণ-আরএফএলের সাথে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস কেন্দ্রিক চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার