ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৩ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও ছেলের সন্ধান নেই, মায়ের আহাজারি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১৩ মার্চ ২০২৫

২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও ছেলের সন্ধান নেই, মায়ের আহাজারি

ক্যাপশন: বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে মিলনকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন করে তার পরিবার ও এলাকাবাসী -টিডিএম।

২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরও ১৯ দিন পার হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও ফেরেনি দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র মিলন হোসেন (২৩)। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেতে কখনো প্রশাসনের দ্বারে, কখনো সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন মা। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তিনি বলছেন, ‘সব হারিয়েছি, শুধু আমার ছেলেটাকে ফেরত চাই।’

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে মিলনকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে মিলনের পরিবারের পাশাপাশি শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পেছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হন মিলন। গভীর রাতে পরিবারের কাছে ফোন আসে অপহরণকারীদের কাছ থেকে। প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এরপর সেই অঙ্ক একে একে ৫, ১০, ১৫, এবং শেষ পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।

অসহায় পরিবার সবকিছু বিক্রি করে, ধার-দেনা করে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করে। ৯ মার্চ রাতে অপহরণকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে উঠে টাকা নিয়ে যায় মিলনের পরিবার। পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় ট্রেন চলন্ত অবস্থায় নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা ফেলে দিতে বলে অপহরণকারীরা। মিলনের পরিবারের সদস্যরা টাকা ফেলে দেওয়ার ১০ মিনিট পর অপহরণকারীদের কাছ থেকে নিশ্চিত বার্তা পান যে টাকা পৌঁছেছে।

এরপর অপহরণকারীরা জানায়, দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে মিলনকে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মিলনের দেখা মেলেনি। এরপর থেকে তার ফোন নম্বর বন্ধ, কোনো খোঁজ নেই।

মিলনের মা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা ২৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে, কিন্তু আমার ছেলেকে দেয়নি। আমি জানি না, সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে! ওরা কি এত নিষ্ঠুর? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমার সন্তানকে খুঁজে দিন!’

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এমন ভয়াবহ ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ে নজিরবিহীন। মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পাওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ বলছে, ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

জেলার পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মিলনকে উদ্ধারের জন্য। প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।’

মেসেঞ্জার/আরিফ/তুষার