ঢাকা,  শুক্রবার
১৪ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদ হত্যা মামলা

আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের কাস্ডুটিতে থাকা চৌদ্দটি আলামত জব্দ করলো ট্রাইবুনাল

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ২০:২০, ১৩ মার্চ ২০২৫

আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের কাস্ডুটিতে থাকা চৌদ্দটি আলামত জব্দ করলো ট্রাইবুনাল

ক্যাপশন: রংপুরের চীফ মেট্রোপলিটন আদালতের সামনে শুনানী শেষে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর এসএম মইনুল করিম ও পিবিআইয়ের রংপুর পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। রংপুর ব্যুরো -টিডিএম।

আদালতের আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের কাস্ডুটিতে থাকা বৈষম্যবরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলার চৌদ্দটি আলামত জব্দ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-আইসিটি।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে রংপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক রাশেদুল হোসাইন শুনানি শেষে এই জব্দের আদেশ দেন।

রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর শাহীনুর আলম জানান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালেরতদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমীন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিবিআইয়ের কাস্ডুটিতে থাকা আলামত জব্দের জন্য আবেদন করেন। ট্রাইবুনালের পক্ষে শুনানী করেন প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার এসএম মইনুল করিম।

উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদ হত্যা মামলার আরেক তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। আদালত শুনানী শেষে ১৪ টি আলামত জব্দের নির্দেশ দেন।

শুনানিতে অংশ নেয়া আইসিটি প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার এসএম মইনুল করিম জানান, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবানুলের সেকশস-৮, সাব সেকশন এ-৩/১ এর ক্ষমতাবলে আদালতের আদেশ ছাড়াই আলামত জব্দ করার ক্ষমতা দেয়া আছে। তদুপরি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই আইনে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে আলামত জব্দ করা হয়েছে। পিবিআইয়ের কাস্ডটিতে আরও অনেক আলামত আছে। এখন তদন্তের প্রয়োজনে যে ১৪ টি আলামত প্রয়োজন সেগুলো আদালতের আদেশে ট্রাইবুনাল জব্দ করলো। প্রয়োজনে বাকিগুলোও জব্দ করা হবে।’

পিবিআই সূত্র জানায়, আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের কাস্ডুটিতে থাকা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, আবু সাঈদের রক্তমাখা শার্ট, হাসপাতালে ভর্তির সময় বুলেটবিদ্ধ রক্তমাথা শরীরের ছবি, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক আলামতসহ ১৪টি আলামত যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রাইবুনালের তদন্ত কর্মকর্তাকে জব্দ করতে দেয়া হয়েছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আলামতগুলো ঢাকায় ট্রাইবুনালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, ‘আদালতের আদেশে আমাদের কাস্ডুটিতে থাকা আলামতগুলোর মধ্যে ১৪ টি আলামত আমরা ট্রাইবুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আলামতগুলো ট্রাইবুনালকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি সআবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটের সামনে এলাকা পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের একজন প্রসিকিউটরের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পরে ভিসির কনফারেন্স রুমে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে বহনকারী শিক্ষার্থী, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আবু সাঈদকে প্রথমে রেসকিউকারী কলেজ শিক্ষার্থী সিয়াম আহসান আয়ান, সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, মামলার বাদি সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ ভ্যানচালক ওমর আলীসহ বিভিন্ন জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

এছড়াও আবু সাঈদসহ জুলাই বিপ্লবে শহীদ রংপুরের ২২ জনের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, গণমাধ্যমকর্মী এবং আহতদের সরাসরি সাক্ষ্য এবং তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করেন।

বৈষম বিরোধী আন্দোলনের সময় গেল ১৬ জুলাই দুপুর দুইটা সতেরো মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নং গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যান রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই ঘটনার পর বাড়তি মাত্রা পায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় এই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনে চলছে বাংলাদেশের কার্যক্রম।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থী এবং বিএনপি-জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের নামে পরের দিন ১৭ জুলাই একটি মামলা করেছিল পুলিশ। ৫ আগস্টের পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন বড় ভাই রমজান আলী।

ওই মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন, এএসআই আমীর আলী, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, প্রক্টোরিয়াল কর্মকর্তা রাফিউল হাসান, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই বিভূতিভূষণ রায়, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় রায়, দফতর সম্পাদক বাবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামী করা হয়।

পরে ১৪ অক্টোবর আরও ৭ জনকে ওই মামলায় এজাহারে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য মামলা বাদি আদালতে আবেদন করেন। ২৯ অক্টোবর এক আদেশে বিচারক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদ, সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নূরুন্নবী, সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম ও সুরতাহাল রিপোর্টে প্রতিস্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতকে আসামী হিসেবে এজাহারে অন্তর্ভূক্তির আদেশ দেন। এনিয়ে এই মামলায় ৩৪ জন নামী আসামী রয়েছে।

এই মামলায় মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে আগামী ৯ এপ্রিল হাজির করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৩ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল সুজন চন্দ্র, এসআই আমির হোসেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমনার চৌধুরী আকাশ গ্রেপ্তার আছেন। এই মামলার আসামী সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন।

মেসেঞ্জার/তুষার