
ছবি : মেসেঞ্জার
যমুনা নদীর উপর নির্মিত নতুন রেলসেতুর উভয়লেন আগামী ১৮ মার্চ (মঙ্গলবার) থেকে উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এদিন থেকে যমুনা সেতুর উভয়লেন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ফলে যমুনা রেলসেতু দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর গন্তব্যে পৌঁছাতে গড়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় কম লাগবে। এদিকে নতুন রেলসেতুতে পূর্ণগতিতে ট্রেন চলাচলের আগেই ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৯ মার্চ থেকে এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী সকল ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অনদিকে, নতুন যমুনা রেলসেতু থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত এবং আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত সিঙ্গেল রেললাইনের কারণে রাজশাহী থেকে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর সময় কতটা সাশ্রয় হবে, তা এখনি বলা যাচ্ছে না। সিঙ্গেল রেললাইনের কারণে বিপরীতমূখি ট্রেনগুলোকে পাসিং দিতে ট্রেনগুলোকে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখতেই হচ্ছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেতু নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় বাবদ ব্রিটিশ আমল থেকে পন্টেজ চার্জ (রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল) আদায় করা হয়। সাধারণত রেললাইনের উপরে ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘের কোনো সেতু বা স্থাপনা থাকলে সেটির জন্য ‘পন্টেজ চার্জ’ আদায়যোগ্য। এই পন্টেজ চার্জ যাত্রীদের ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। আগে সেতুতে পন্টেজ চার্জ ছিল ১৬ দশমিক ৮ গুণ। সেটি পদ্মা সেতু চালুর সময় ২৫ গুণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ের ক্ষেত্রে একটা সরকারি সিদ্ধান্ত আছে, প্রতি কিলোমিটার সেতুর জন্য ২৫ কিলোমিটারের দূরত্ব দেখাতে হবে। অর্থাৎ সেতুতে এক কিলোমিটার সমান সাধারণ ২৫ কিলোমিটারের ভাড়া হিসাব করতে হবে। এ হিসাবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার যমুনা রেলসেতুর ভাড়ার হিসাব করতে হবে ১২০ কিলোমিটার ধরে। আগে যমুনাসেতুতে চলা ট্রেনের ক্ষেত্রে ‘পন্টেজ চার্জ’ যোগ করে দৈর্ঘ্য দাঁড়াত প্রায় ৮১ কিলোমিটার। নতুন হারে সেতুর দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার বেড়েছে, একই হারে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের ভাড়াও বাড়ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, যমুনা রেল সেতুর উপর দিয়ে সারা দেশে ২৮ থেকে ৩০টি ট্রেন চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেনের ভাড়া বাড়বে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, রুট-ভিত্তিক ভাড়ার তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই তালিকা থেকে জানা গেছে, সিটের শ্রেণিভেদে সর্বনি¤œ ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৪৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়বে।
রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুট
শোভন চেয়ারের বর্তমান ভাড়া ৪০৫ টাকা, থেকে বেড়ে হবে ৪৫০ টাকা। এসি চেয়ার ৬৭০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৭৫০ টাকা। এসি সিট ৮০৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৯০০ টাকা। এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ২০৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৩৪৫ টাকা। এই হিসাবে শোভন চেয়ারে ৪৫ টাকা, এসি চেয়ারে ৮০ টাকা, এসি সিটে ৯৫ টাকা এবং এসি বার্থে ১৪০ টাকা ভাড়া বাড়ছে।
খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুট
শোভন চেয়ারের ভাড়া বর্তমানে ৬৩০ টাকা, বর্ধিত ভাড়া হবে ৬৮০ টাকা। এসি চেয়ার ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ১৩০ টাকা। এসি সিট ১ হাজার ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৩৫৫ টাকা। এসি বার্থ ভাড়া ১ হাজার ৮৮৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ২ হাজার ৩০ টাকা। এই হিসাবে শোভন চেয়ারে ৫০ টাকা, এসি চেয়ারে ৮০ টাকা, এসি সিটে ৯৫ টাকা এবং এসি বার্থে ১৪৫ টাকা ভাড়া বাড়ছে।
পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় রুট
শোভন চেয়ারের ভাড়া বর্তমানে ৬৯৫ টাকা, সেটি বেড়ে হবে ৭৪০ টাকা। এসি চেয়ার ১ হাজার ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ২৩৫ টাকা। এসি সিট ১ হাজার ৩৯০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৪৮০ টাকা। এসি বার্থ ভাড়া ২ হাজার ৮৫ টাকা বেড়ে হবে ২ হাজার ২১৫ টাকা। এই হিসাবে শোভন চেয়ারে ৪৫ টাকা, এসি চেয়ারে ৭৫ টাকা, এসি সিটে ৯০ টাকা এবং এসি বার্থে ১৩০ টাকা ভাড়া বাড়ছে।
এছাড়া যমুনা রেলসেতু দিয়ে চলাচলকারী অন্যান্য রুট লালমনিরহাট/রংপুর-ঢাকা-লালমনিরহাট/রংপুর, চিলাহাটি-টাকা-চিলাহাটি এবং কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের ভাড়াও বাড়বে।
ভাড়ার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গড়ে সর্বোচ্চ শোভন চেয়ারে ৪৫ টাকা, এসি চেয়ারে ৮০ টাকা, এসি সিটে ৯৫ টাকা এবং এসি বার্থে ১৪৫ টাকা ভাড়া বাড়ছে।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার