
ছবি : মেসেঞ্জার
রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলা থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে বাদ দেয়ার জন্য পুলিশের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলার ঘটনায় রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে (বিপি-৮১১০১২৬৮৮৩) প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সাথে তাকে হেড কোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
শনিবার (১৫মার্চ) বিকেল ৫ টায় পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স এর ডিআইজি প্রশাসন মো. ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত এক আদেশে (স্মারক নং-৪৪.০.০০০০,০১১.০১৯.০১৫.২৫-১০৬৭) তাকে আগামীকাল (১৬ মার্চের) মধ্যে হেড কোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (হেড কোয়ার্টার্স ও অতিরিক্ত দায়িত্ব অপরাধ) মো. হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আদেশে উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে হেড কোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় চাঁদাবাজির মামলার বাদি পলাশ হাসানকে (২৭) মারপিট এবং কনেস্টবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে উপ-পুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি জিডি এবং হেড কোয়ার্টার্সে প্রতিবেদন পাঠায় পুলিশ।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সংশ্লিষ্ট তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, গত ১১ মার্চ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে ডিসি শিবলী কায়সার এবং ব্যবসায়ী অমিত বণিকের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদার বিনিময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেত্রী লিপিখান ভরসাকে মামলা থেকে নাম বাদ ও সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হয়। এতে একটি অডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। ওই ক্লিপে লিপি খান ভরসাকে ব্যবসায়ী অমিত বণিককে বলতে শোনা যায়, উপ-পুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সারকে ১০ লাখ টাকা দিলে লিপি খান ভরসার মামলা থাকবে না এবং সুরক্ষা পাবেন। ওই অভিযোগটি পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স তদন্ত সূত্র আরও জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৩মার্চ) আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী অমিত বণিক ও উপ-পুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সারকে আসামী করে লিপি খান ভরসার ম্যানেজার পলাশ হাসান আরপিএমপি কোতয়ালী থানায় চাঁদাবাজির মামলার এজাহার নিয়ে যান। ওই দিন দুপুরে হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশে কোতয়ালী থানার ওসি অমিত বণিককে আটক করে থানায় আনেন।
খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী থানায় উপস্থিত হয়ে বাদি পলাশ হাসানকে মারপিট ও একজন কনেস্টবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করার চেষ্টা করেন এবং নিজের নাম বাদ দিতে বাধ্য করেন।
এসময় কোতয়ালী থানার ওসির ওপরও হাত তোলার চেষ্টা করেন বলে তদন্তকারীরা অভিযোগ পান। এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি এবং পুলিশ হেডকোর্য়াটার্স-এ গোপন প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়। সেই সূত্রে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে হেডর্কোয়াটার্স।
এরপর নানা নাটকিয়তার পর বাদী পলাশ হাসানকে গভীর রাতে পুলিশ বাড়িতে দিয়ে আসে। পরের দিন শুক্রবার (১৪ মার্চ) অমিত বণিককে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তুললে বিচারক তাকে কারাগারে পঠানোর নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে অমিত বণিকসহ বিভিন্ন জনকে দিয়ে আসামীদের সাথে আর্থিক লেনদেনের দেনদরবার করা এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, এসব অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সুস্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে তাকে হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩মার্চ) বিকেল ৩ টায় মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) থেকে বদলি করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) তে সংযুক্ত করেন রংপুর মহানগর পুলিশ মো. মজিদ আলী।
পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স সূত্র আরও জানিয়েছে, এর আগে রংপুরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে জাহাজ কোম্পানী মোড়ে হামলায় গুরুতর আহত রংপুরের জিয়া মঞ্চের নেতা লুসার আহমেদ ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আসামী করে মামলা দিলে ওই কর্মকর্তা নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে তার নাম কেটে দেন।
এসময় একজন বিএনপি নেতা নাম কাটার বিরোধিতা করলে উল্টো ওই নেতাকেই মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানোর জন্য ওসিকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ওই কর্মর্তার বিরুদ্ধে রাঙামাটির সার্কেল এসপি থাকাকালীন সময়ে সেই সময়কার পুলিশ সুপারকে থাপ্পর মারার অভিযোগে বিভাগীয় প্রসেডিং হয়েছিল। এছাড়া একজন ডিআইজির সাথেও অপেশাদার আচরণের কারণে প্রসেডিং হয়েছিল।
বিগত আওয়ামী লীগ আমলে সুসম্পর্কের জেরে ওই দুটি প্রসেডিং উৎরাতেও সক্ষম হন তিনি এবং বিষয়টি জোড় গলায় বলে বেড়ান।
তদন্ত সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছিল বিএনপি জামায়াত এবং শিক্ষার্থীদের নামে। ৫ আগস্টের পর সেই মামলাগুলো পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিলেও ওই কর্মকর্তা তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। সেই সময়কার উর্ধতন কর্মকর্তারা বার বার তাকে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে বললেও তিনি তাদের সাথে অপেশাদার আচরণ করেন।
পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের সূত্র আরও জানিয়েছে, মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তিনি রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ভুল বুঝিয়ে তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করানো ছাড়াও সংবাদ সম্মেলন করানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, থানার ঘটনায় জিডি করে হেডকোয়ার্টার্সকে জানানো হয়েছে। হেড কোয়ার্টার্সকে তাকে সেখানে রিপোর্ট করতে বলেছে। তার বিরুদ্ধে আর কি ব্যবস্থা গ্রহণ হবে সেটি হেড কোয়ার্টার্স বলতে পারবে।
তিনি আরও জানান, লিপিখান ভরসাকে গ্রেপ্তারে রাজধানীর গুলশানে তার বাসা ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী ছাড়াও মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিতে অর্থলেনদেনের যোগসাজস করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।
মহানগর পুলিশ কমিশনারও আরও জানান, গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী অমিত বণিকের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে অর্থ জোগান দেয়া এবং আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার অভিযোগও আছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মেসেঞ্জার/তুষার