ঢাকা,  শনিবার
২৯ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

জয়পুরহাটে আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে নিতে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা: পুলিশসহ আহত ৭, গ্রেপ্তার ৫

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:০২, ১৯ মার্চ ২০২৫

জয়পুরহাটে আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে নিতে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা: পুলিশসহ আহত ৭, গ্রেপ্তার ৫

ছবি : মেসেঞ্জার

জয়পুরহাটে ক্ষেতলালে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে নিতে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে সাতজন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ক্ষেতলাল থানায় এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্বে এই হামলা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় রাতেই থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি থানা হামলা ও পুলিশকে আহত করার অন্যটি চাঁদাবাজির মামলা। থানা হামলা ও পুলিশকে আহত করার মামলায় পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কালাই থানা পুলিশের শতাধিক সদস্য থানায় অবস্থান নেয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দেলোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪৭), মো. বিপ্লব হোসেন (২৪), মো. ফারুক হোসেন (৩২), উজ্জল (৩৪) ও সজিব (২৮)। আহতরা হলেন, ক্ষেতলাল পৌর এলাকার শাখারুঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন, একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম, বগুড়ার শাহজাহানপুরের রফিক মিয়া ও আব্দুল মুমিন। আহত দুই পুলিশ সদস্য কাজী জাফর ও সুমন হোসেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জে আহত হন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক।

জেলা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে বগুড়ার শাহজাহানপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ক্ষেতলালের মিজানুর রহমানের কাছে জমি কিনেন। ওই জমি মঙ্গলবার ক্ষেতলাল সাব-রেজিষ্ট্রি কার্যালয়ে দলিল সম্পাদন করতে আসেন।

এসময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থসহ বিএনপির কয়েক জন নেতা-কর্মী সেখানে গিয়ে জমির ক্রেতার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন।

এতে জমির ক্রেতা তাদের চাঁদা দিতে অপারগতা জানান। তখন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ও তার লোকজন দলিল সম্পাদন করতে দেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন।

এ নিয়ে তোফাজ্জল ও তার স্বজনদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থ ও তার লোকজনেরা তোফাজ্জলের আত্মীয়দের বেধড়ক মারপিট করে জখম করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ গুরুত্বর আহত তোফাজ্জলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।

এ ঘটনায় তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করতে যান। এ খবর পেয়ে ইফতারের আগ মুর্হুতে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থ তার দলবল নিয়ে থানায় গিয়ে হামলা করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই ঘটনার সময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ছিলেন। ঘটনার সময় তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল পৌর এলাকার শাখারুঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য তিনি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সেখানে স্থানীয় পৌর বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির কর্মী মাসুদ চৌধুরী, গোলাম মওলা ও জুয়েল রানা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

তোফাজ্জলের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় তারা বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থকে জানায়। পরে পার্থ এসে হুমকি দেয়, চাঁদা না দিলে রেজিস্ট্রি হবে না। তাকে বাধা দিতে গেলে আমিসহ আমার চার আত্মীয়কে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পুলিশ সেসময় তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে থানা থেকে আটক তিনজনকে ছাড়াতে সেখানে যান বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা বাকি তিনজনকে ছাড়িয়ে নিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন থানায় হামলা করেন।

জানতে চাইলে ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি লোকজনদের নিবৃত্ত করতে থানায় গিয়েছিলেন। এ ঘটনার দলীয়ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি নিয়ে বসব।

মুঠোফোন বন্ধ থাকায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান বলেন, আমার বাসা উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। তবে আমি ঘটনাটি শুনেছি। যদি দলের কেউ অপরাধ করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি একটা জরুরি মিটিংয়ে আছি। মঙ্গলবার রাতে থানায় দুটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বাদি হয়ে সাত জন নামীয়সহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেছেন। থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার ঘটনায় থানা এসআই সঞ্চয় কুমার বর্মণ বাদি হয়ে ২০ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

এ মামলায় পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

মেসেঞ্জার/রমি/তুষার