ঢাকা,  রোববার
৩০ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

সিএইচসিপি লতিফা অফিসে আসেন পরে, যান আগে!

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ২৫ মার্চ ২০২৫

সিএইচসিপি লতিফা অফিসে আসেন পরে, যান আগে!

ক্যাপশন : যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার সদুল্যাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি লতিফা পারভীন লাবনি -টিডিএম।

যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার সদুল্যাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি লতিফা পারভীন লাবনির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দেরিতে অফিসে এসে আগে ভাগেই বের হয়ে যান। যতটুকু অফিসে থাকেন তার সিংহভাগ সময় ভিডিও কলে কথা বলায় ব্যস্ত থাকেন।

এছাড়া ওষুধ বিতরণের সময় রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, দুর্ব্যবহার, চাকরি বাণিজ্য, বিয়ের নামে একাধিক পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। যদিও লতিফা বলেছেন, স্থানীয়দের সব অভিযোগ সঠিক নয়।

জানা গেছে, সদুল্যাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন লতিফা পারভীন লাবনী। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অফিস সময় হলো সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত। কিন্তু তিনি কর্মস্থলে নিজের ইচ্ছামতো যাতায়াত করেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদুল্যাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের গেটে তালা ঝুলছে।

আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বললে জানান, লতিফা পারভীন লাবনী সকাল ১০ টার পর অফিসে আসেন। আর দুপুর ১ টার পর পরই তিনি চলে যান। এতে সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ আনতে গেলে লতিফা প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৫ টাকা করে আদায় করেন। টাকা দিতে রাজি না হলে দুর্ব্যবহার করা হয়।

তারা আরও জানান, অফিসে থাকাকালীন লতিফা পারভীন লাবনী অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে ভিডিও কলে কথা বলায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেকে সেবা না পেয়ে ফিরে আসেন।

মনিরা খাতুন নামে এক নারী জানান, তার ভাবি জান্নাতুল মতলুপা নাইসকে স্বাস্থ্য কর্মী পদে চাকরি দেয়ার নামে লতিফা পারভীন আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু তার চাকরি দিতে ব্যর্থ হন। আবার টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করতে থাকেন। এ ঘটনায় লতিফার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পরে দুই লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারী পুরুষ দাবি করেন, লতিফা পারভীন লাবনী বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুটে নেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫ জনকে বিয়ে করেছেন। তার মধ্যে দুইজন প্রবাসী। বাকিদের মধ্যে ১ জন স্বর্ণকার, ১ জন শিক্ষক ও আরেকজন চাকুরিজীবী।

তারা আরও জানান, লতিফার মূল টার্গেট থাকে সম্পদশালী ও প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর সৌন্দর্য ও কথার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন টার্গেটকৃত পুরুষদের। বিগত দিনে তিনি যশোর শহরের রেলগেট এলাকার এক যুবককে ফাঁদে ফেলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা সম্মান হারানোর ভয়ে আইনের আশ্রয় নেন না। বর্তমানে তিনি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নামে এক আমেরিকা প্রবাসীকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লতিফা পারভীন লাবনী জানান, এলাকাবাসীর সব অভিযোগ সঠিক নয়। রমজান মাসে একটু আগেভাগেই অফিস থেকে চলে আসেন।

চাকরির দেয়ার নামে কারও সাথে প্রতারণা করেননি। চাকরি প্রত্যাশীকে কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে দিয়েছিলেন মাত্র। কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে ভিডিও কলে ব্যস্ত থাকা ও একাধিক বিয়ে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।

যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, স্বাস্থ্য কর্মী লতিফা পারভীন লাবনীর অফিস ফাঁকিসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, গ্রামের মানুষের সেবা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হয়। লতিফা পারভীন লাবনীর নানা অনিয়মের অভিযোগ খোঁজ নেয়া হবে।

মেসেঞ্জার/তুষার