
ক্যাপশন : রাজশাহীর তানোরে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় সেচের অভাবে পতিত কৃষকের তিনবিঘা জমি -টিডিএম।
রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটরের প্রভাষক স্বামীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী কৃষক নাসির উদ্দীন মুন্ডুমালা পৌরসভার হাসনাপাড়া চোরখোর গভীর নলকূপ অপারেটরের স্বামী, মুন্ডুমালা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও কৃঞ্চপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের আইসিটির প্রভাষক সারওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলীকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদার টাকা না দেয়ায় ভুক্তভোগী কৃষকের জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তার তিন বিঘা জমি পতিত রয়েছে।
এদিকে চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত হারে সেচ চার্জ আদায়সহ নানা অনিয়মের ঘটনায় প্রতিদিন বিএমডিএ’র তানোর জোনে লিখিত অভিযোগ জমা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএমডিএ’র তানোরের সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান নিরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, তার বাড়ি উপজেলার যোগীশো গ্রামে। এ কারণে তিনি নামমাত্র অফিস করে শহরে চলে যান। ফলে অফিসে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সমস্যা সমাধান করেন না। অন্যদিকে গভীর নলকূপের আওতায় কৃষকদের নিকট চাঁদাবাজ অপারেটরের অপসারণ করে সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকূপ পরিচালনার জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুন্ডুমালা পৌরসভার হাসনাপাড়া চোরখোর পূর্বদিকে গভীর নলকূপ রয়েছে। যার জেএল নং ৫৬, দাগ নং ৮৭৯। গভীর নলকূপটির সামান্য পূর্বদিকে ভুক্তভোগী কৃষক নাসির উদ্দীনের তিন বিঘা জমি সেচের অভাবে পতিত রয়েছে। তার জমির আগের ও পরের জমিতে ধান রোপন করা রয়েছে।
এ বিষয়ে অপারেটরের স্বামী, বিএনপি নেতা প্রভাষক সারওয়ার জাহান জানান, ‘নাসির উদ্দীনের জমি গভীর নলকূপের স্কীম ভুক্ত নয়। জমি স্কীম ভুক্ত করতে তাকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া কোন শক্তি নেই, তার জমিতে পানি দেওয়ায়। যত বড়ই কর্মকর্তা আসুক টাকা ছাড়া পানি দেওয়া যাবে না।
অপারেটর কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার স্ত্রী।’ ড্রাইভার মালেক জানান, ঐ গভীর নলকূপের অপারেটর প্রভাষক সারওয়ার জাহানের স্ত্রী সালমা। তারা শহরে থাকেন। তিনি (মালেক) নলকূপ দেখভাল করেন। তিনি জানান, কৃষক নাসির উদ্দীন অতীতে এই নলকূপ থেকে পানি নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। তিনি স্কীমভুক্ত কৃষক। তাকে অপারেটর সালমার স্বামী নাসিরের জমিতে পানি দিতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য তিনি পানি দেননি। স্থানীয়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এরা (অপারেটর) কৃষকের উপর জুলুম করছেন। এতদিন চাষাবাদ করল, এখন বলছে স্কীমভুক্ত কৃষক নয়। যত মরণ কৃষকের।’
জানা গেছে, বিএমডিএর সেচ নীতিমালায় আছে, গভীর নলকূপের অপারেটর পদে যিনি নিয়োগ পাবেন, তাকেই নলকূপ পরিচালনা করতে হবে। অথচ দলের প্রভাব খাঁটিয়ে তথ্য গোপন করে স্ত্রীর নামে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। অথচ তারা শহরে থাকেন।
ভুক্তভোগী কৃষক নাসির উদ্দীন বলেন, ২১ বছর ধরে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষাবাদ করে আসছি। কিন্তু এবার অপারেটরের বিএনপি নেতা স্বামী, প্রভাষক সারওয়ার জাহান শক্রতা করে তার জমিতে সেচের পানি দিচ্ছেন না। সেচের পানি চাইলে তালবাহানা করেন। পুনরায় পানি চাইলে রাগান্বিত হয়ে তিন বিঘা জমির জন্য ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এদিকে পাঁচন্দর ইউপির কৃঞ্চপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ড ওলামা বিভাগের সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতি বিঘায় অতিরিক্ত ৫০০ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী কৃষক আলম জানান, তার ১০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে বাড়তি ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন অপারেটর মিজান। অথচ কার্ডের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অভিযুক্ত অপারেটর মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কাজের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও অপারেটর ছিলেন।
এসব বিষয়ে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী (অতি: দায়িত্বে) জামিনুর রহমান জানান, অভিযোগ হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অপারেটর শহরে থাকে, কিভাবে নিয়োগ পায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার