ঢাকা,  শনিবার
২৯ জুন ২০২৪

The Daily Messenger

১৫ বছরে ৬টি বাজেটের সমপরিমাণ টাকা পাচার!

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৩ জুন ২০২৪

আপডেট: ১৪:৪৭, ৩ জুন ২০২৪

১৫ বছরে ৬টি বাজেটের সমপরিমাণ টাকা পাচার!

ছবি : মেসেঞ্জার

আর মাত্র তিনদিন বাকি। আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে। তার পূর্বেই রাজনীতিবিদদের থেকে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন ধরণের অভিমত উঠে আসছে। বলা হচ্ছে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে অন্তত ছয় বছরের বাজেটের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা সবাই সরকার ও ক্ষমতাসীনদের অনুসারী বলেও অভিযোগ।

রাজনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ নির্ভর হয়ে দেশের অর্থনীতি পুরো ফোকলা হয়ে গেছে। যে সমস্ত নিম্নবিত্ত রয়েছে যাদের বেতন মাসে ১০ হাজার টাকা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদেরও মাসের শেষে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তার একমাত্র কারণ সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ,পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মতো শত শত দুর্নীতিগ্রস্থ এবং পাচারকারি চিহ্নিত হলেও গত ১৫ বছরে তাদের অনেকের বিচার করা হয়নি। অর্থ পাচার করে দেশ দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেছেন, গত ১৫ বছরে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই টাকাগুলো উদ্ধার করতে পারলে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি বছরের  বাজেট অনায়াসে করা যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যারা ১৫ বছরে টাকা পাচার করেছে তারা সবাই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় করেছে। এই পাচারকারীরা যখন চিহ্নিত হয় তখন আবার সরকারের সহযোগিতা তারা পালিয়েও যায়। দুর্নীতির সম্রাট বেনজীরের ক্ষেত্রে তাই দেখা গেছে। আরেক সম্রাট আজিজও একই পথে। আসলে এ সরকারের পক্ষে দুর্নীতিবাজদের ধরা সম্ভব না । কারণ এ দুর্নীতিবাজদের কারণে এ সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে বলতে বাধা নেই এই দেশ মানুষের বসবাসের দেশ না! ডিমের দাম পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে । গরিব মানুষ আর সবজিও কিনে খেতে পারছে না । যার বেতন মাসে ১০ হাজার টাকা, বেঁচে থাকার তাগিদে ওই মানুষকেও মাসের শেষে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এগুলোর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যেতো যদি দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। ঋণ খেলাপীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যেতো।  পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যেতো। এই সরকার এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ । তবে আল্লাহ ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না । তার প্রকৃত উদাহরণ হয়ে থাকবে এমপি আনার। ১৫ বছরের ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, অতীতে যত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তা কখনোই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ঘাড়তি থাকে প্রচুর। যে সকল ডেভেলপমেন্টের পরিকল্পনা নেয়া হয় তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারে না। এতে করে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায় তাতে আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সুবিধা হয়। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যেই ধরনের বাজেট দরকার তা তারা (সরকার) কখনোই গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে পারেনা।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, ক্ষমতাসিন সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে ফেলেছে। পত্র-পত্রিকার খবরগুলো বলছে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা পাচার হচ্ছে আর সেগুলো অবশ্যই ডলারের মাধ্যমেই হচ্ছে। পাচারের অর্থ গুলো যোগ করলে অবশ্যই কয়েকটি বাজেট করা যেতে পারে এমন সংখ্যা দাঁড়াবে। পৃথিবীর সকল দেশে প্রত্যেক বছর বাজেটের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে তেমনি এই সরকারও সংখ্যা বাড়াচ্ছে।  এবার সম্ভবত সাড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকার উপরে করা হচ্ছে। এখন যাদের বেতন ১০-১২ হাজার টাকা কিংবা গরিবদের জন্য কি থাকছে সেটা বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করি তখন মন্তব্য করব।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে বাজেট ঘোষণা করা হয়, যাতে করে সেই বাজেট থেকে তারা উপকৃত হয়। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমরা তার ছিটেফোটাও দেখতে পাইনি। বাজেট থেকে শুধু সরকার এবং তার সুবিধাভোগীরা উপকৃত হয়। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বেগম পাড়া তৈরি করে। এবার যেই বাজেট ঘোষণা করা হবে তা থেকেও সাধারণ মানুষের কোন উপকার হবে বলে মনে হয় না।

এ ছাড়া দেশের সচেতন মহল থেকে দাবি উঠেছে, দারিদ্র্যতা, নদীভাঙন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবং কর্মসংস্থানের আশায় গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক প্রতিনিয়ত রাজধানী ঢাকায় ভিড় করছেন। মেগাসিটি ঢাকায় ৩০ হাজারের বেশি বস্তিতে প্রায় ৩৫ লাখ লোক বাস করে এবং যার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দারিদ্র্য ও অসচেতনতার কারণে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারে না। দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। আরো রয়েছে লাখ লাখ পথশিশু। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যার ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাই এবারের বাজেটে বেকারত্ব দূরীকরণ, নদী ভাঙ্গন রোধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং শিশুদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।

মেসেঞ্জার/দিশা

Advertisement