ঢাকা,  বুধবার
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সেমিনার

জলবায়ু রক্ষায় যৌথ বিনিয়োগের পক্ষে মত দিলেন বিশেষজ্ঞরা

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জলবায়ু রক্ষায় যৌথ বিনিয়োগের পক্ষে মত দিলেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি : মেসেঞ্জার

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের আয়োজনে রাজধানীতে এক উচ্চপর্যায়ের সেমিনারে এ বিষয়ে মত-বিনিময় করেন তারা। ‘ক্যাটালাইজিং ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন অ্যাকশন অ্যান্ড মোবিলাইজিং ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক এ কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা সমবেত হন।

দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় বক্তারা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি/ন্যাপ), জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল এবং টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আলোচকরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জলবায়ু খাতে দ্রুত ও কার্যকর বিনিয়োগ অপরিহার্য।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করছি, তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়ন ও বিনিয়োগকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে না রেখে আমাদের উচিত সাসটেইনেবিলিটি, প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সমাজের মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অ্যাডাপটেশন ইকোনমি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জলবায়ু সহনশীলতা ও অভিযোজনে আজ ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে তা প্রতিদিন ১০ গুণ আর্থিক সুবিধা এনে দিতে পারে। কারণ এটি অর্থনৈতিক ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষতি রোধ করে।  সঠিক নীতিগত সংস্কার, আর্থিক উদ্ভাবন ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগকে গতিশীল করতে পারি। এতে জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সিনিয়র সাসটেইনেবিলিটি অ্যাডভাইজার জন মার্টন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ লাভজনক। তবে বৃহৎ পরিসরে প্রভাব আনতে হলে নীতিগত সমন্বয়ের গতি বাড়াতে হবে এবং বেসরকারি মূলধন উন্মুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপাক্ষিক সংস্থা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর গোয়েন লুইস, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এবং ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অরিঞ্জয় ধর অংশ নেন।  আলোচকরা বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা ও অভিযোজনের জন্য ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন, যার ৪০ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আশা করা যাচ্ছে। কার্যকর জলবায়ু কার্যক্রম ও বিনিয়োগের জন্য বহুপাক্ষিক সহযোগিতা অপরিহার্য, যা অংশীদারিত্ব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

আলোচকরা উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি চালু হয়েছে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি), যা মূলত দেশের জলবায়ু কার্যক্রমের একটি প্ল্যাটফর্ম। এটি সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাতের মধ্যে দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, স্থানীয় দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো বিনিয়োগে জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, নতুন অর্থায়ন কাঠামো ও মিশ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে জলবায়ু বিনিয়োগে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে দুটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হয়। ড. নন্দন মুখার্জি জলবায়ু-সহনশীল আবাসন নিয়ে গবেষণা তুলে ধরেন, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অভিযোজন প্রযুক্তির প্রসারের সুযোগ আলোচনা করা হয়। ড. এফ এইচ আনসারি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসিআই এগ্রো বিজনেস, কৃষি খাতে অভিযোজন বিনিয়োগের গুরুত্ব, জলবায়ু-স্মার্ট চাষাবাদ, টেকসই সেচ ব্যবস্থা ও স্থিতিস্থাপক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জলবায়ু অর্থায়ন ও অভিযোজন উদ্যোগের প্রবক্তা হিসাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১২০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যাংকটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টিকে থাকার সক্ষমতা গঠনে অংশীদার হয়ে কাজ করছে। ব্যাংকটি বাংলাদেশের প্রথম ইউটিলিটি-স্কেল সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের অর্থায়ন এবং সবুজ ও গ্রিন জিরো-কুপন বন্ড চালুর মতো টেকসই অর্থায়ন উদ্যোগের পথিকৃৎ। টেকসই বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার নিয়ে ব্যাংকটি সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের জলবায়ু সহনশীল ও নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

মেসেঞ্জার/তুষার

আরো পড়ুন