ছবি : মেসেঞ্জার
গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষায় সংরক্ষিত কক্ষে 'অনুমতি না নিয়ে' আসন বণ্টনের জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সাথে এক জুনিয়র শিক্ষক ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ' আচরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া জুনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষককে 'মারতে তেড়ে' যাওয়া ও নিজেকে 'উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ লোক' হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঐ ভুক্তভোগী শিক্ষক।
ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা শিক্ষক হলেন- মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ এবং ভুক্তভোগী শিক্ষক হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আসন বণ্টন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মিডিয়া ল্যাবকে আসন বণ্টনের আওতায় রাখেন।
অনুমতি না নিয়ে কেন এই কক্ষকে আসন বণ্টনের আওতায় আনা হলো এ বিষয়ে কাজী আনিছ কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে ঈদের বন্ধের পর গত ২১ এপ্রিল তাদের দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে। সেখানে কথা কথায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হুসেইন, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাহিদ হাসান।
পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তাদের ঘটনা সমাধানের লক্ষ্যে কয়েকজন শিক্ষক আলোচনায় বসেন। সেখানেও আবু ওবায়দা রাহিদ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষকরা। এই আলোচনায় কাজী এম. আনিছুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
এ ব্যাপারে একাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি খুবই ক্ষুদ্র। ব্যক্তিগত ইগোর জায়গা থেকে সরে আসলে ঘটনাটি সহজেই সমাধান হতে পারতো। একজন শিক্ষকের সাথে আরেকজন শিক্ষক এমন আচরণ কখনো করতে পারেন না। বিষয়টির কোন গভীরতা নেই। আসন বিন্যাস নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা এতদূর টেনে আনার কোন মানে নেই।'
অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হুসেইন বলেন, ‘এই ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয়। শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হয়নি।'
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে আবু ওবায়দা রাহিদ বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এ কারণে মন্তব্য নেই যে, মিজান স্যার ছিলেন, প্রক্টর স্যার ছিলেন, জাহিদ হাসান স্যার ছিলেন। আমাদের দুইজনের মধ্যে যদি কথোপকথন বা তর্কবির্তক হয়ে থাকে তাহলে বাকি তিনজন মানুষ নিরপেক্ষ। বাকি তিনজন যদি বলে থাকেন এ ধরনের কিছু হয়েছে তাহলে আমি ধরে নিব আনিছ ভাইয়ের কথাটি সঠিক।'
সিট বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যথেষ্ট প্রসিডিওর বুঝি। আনিছ ভাই যখন অনুমতির কথা বলেছেন তখন আমি বলেছি যে, আপনার অনুমতি চেয়ে আপনাকে মেইল করেছি। তখন তিনি বললেন, আমি মেইল দেখি নাই। আমি অফিসিয়াল প্রসিডিওরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগকে মেইল করেছি আমরা যাওয়ারও দশদিন আগে।'
সার্বিক বিষয়ে বলেন, 'আমি এখনো বলছি, এধরনের কিছুই হয়নি। আমি মনে করি একজন সহকর্মী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে উনার সহযোগিতা করা উচিত ছিলো। কিন্তু তিনি সেটি না করে উনার চেয়ারম্যানশিপ ফলানোর জন্য আমার সাথে এবং আল-আমিন স্যারের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন করেছেন।'
এ ব্যাপারে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, 'বিভাগের একটি সংরক্ষিত কক্ষে আমার অনুমতি না নিয়েই আসন বণ্টন করা হয় আর এই বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি (আবু ওবাইদা রাহিদ) আমার সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। পরবর্তীতে ঈদের বন্ধের পর আমাদের দেখা হয়। সে সময় আমরা ভালোভাবেই কথা বলি। কিন্তু এক সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে যান।
এরপর আমার সহকর্মীরা সেদিনকার ঘটনা সমাধানের জন্য আমাদের নিয়ে এরপরের দিন আলোচনায় বসেন। সেখানে তিনি আমার দিকে মারতে তেড়ে আসেন এবং উনি উপাচার্যের কাছের শিক্ষক, উনি আমাকে দেখে নিবেন বলে হুমকি দেন।'
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী কোন মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'সকল শিক্ষকই আমার কাছে সমান। আর বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না। এই বিষয়ে অভিযোগ আসলে আমি ব্যবস্থা নিবো। ভুক্তভোগী শিক্ষককে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে।'
মেসেঞ্জার/অনন/আপেল