![ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই শুরু হয়েছে জাবির ৪১ তম সিনেট অধিবেশন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই শুরু হয়েছে জাবির ৪১ তম সিনেট অধিবেশন](https://www.dailymessenger.net/media/imgAll/2024February/Untitled-6-2406291121.jpg)
ছবি : মেসেঞ্জার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (২৯ জুন) ৪১ তম সিনেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে বিকাল ৪ টায় এই অধিবেশন শুরু হয়। তবে সিনেট সদস্যদের সকল আসন পূর্ণ থাকলেও এবারো ছাত্র প্রতিনিধিদের আসন শূণ্য রয়েছে।
১৯৭০ সাল থেকে যাত্রা শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র নয় বার। সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে তৎকালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে।
এরপর সর্বশেষ ২০১৩ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সময় জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি। তারপর থেকে বেশ কয়েকজন উপাচার্য জাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেননি কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ হলো সিনেট। সিনেটে অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে অধ্যাদেশের ১৯ (১) এর (ক) ও ১৯ (২) ধারা মেনে জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেটে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধির আসন গত ৩০ বছর ধরে শূন্য অবস্থায় রয়েছে।
অ্যাক্টের ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া অন্যান্য সিনেট সদস্যরা তিন বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন। আর ছাত্র প্রতিনিধিরা থাকবেন এক বছরের জন্য। তবে তারা পরবর্তী প্রতিনিধি নির্বাচিত, মনোনিত অথবা নিযুক্ত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
অ্যাক্ট অনুযায়ী সিনেটের মোট সদস্য ৯২ জন (উপ-উপাচার্য একজন হলে)। তবে এবারের সিনেটে রয়েছেন ৮৮ জন সদস্য। কেবল ছাত্র প্রতিনিধি পাঁচ জনের আসন শূন্য রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নির্বাচনের পর জাকসু নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন উদ্যোগ নেননি তিনি।
ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশন শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষা গুলো উপেক্ষিত থাকে বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, যেহেতু জাকসু নাই তাই ছাত্রদের প্রতিনিধি সিনেটে থাকে না। এখানে ছাত্রদের সরাসরি বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বাজেট অধিবেশনে না থাকার ফলে ছাত্রদের দাবি দাওয়া কথা তুলে ধরতে পারছে না কেউ। শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে জাকসু কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, '৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জাকসু মনোনীত পাঁচজন সদস্য সিনেটে থাকার কথা থাকলেও প্রশাসন কোনো ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সিনেট অধিবেশন। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেটে হওয়া বাজেট প্রণয়ন কখনোই শিক্ষার্থী বান্ধব হতে পারেনা।
জবাবদিহিতামূলক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব আবশ্যক। তিন দশক অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও জাকসু নির্বাচন না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে। পক্ষান্তরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, কর্মচারীদের নির্বাচন, কর্মকর্তাদের নির্বাচন দিব্যি চলছে বছরের পর বছর।
অথচ যেই শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কথা বলার জন্য কোনো প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশাসন নির্বিকার। বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলে বিভিন্ন অজুহাতে প্রশাসন তা খারিজ করতে তৎপর।'
মেসেঞ্জার/তাওহীদ/আপেল