ঢাকা,  শুক্রবার
১৮ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

মধ্যরাতে জবি শিক্ষার্থীদের মেসে পুলিশ পরিচয়ে হানা

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৮ জুলাই ২০২৪

মধ্যরাতে জবি শিক্ষার্থীদের মেসে পুলিশ পরিচয়ে হানা

ছবি : সংগৃহীত

মধ্যরাতে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেসে পুলিশ পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীরা আতঙ্কিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করছেন। 

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাত বারোটার পর পুরান ঢাকার শিংটোলা, ধোলাইখাল, রুকনপুর, গেন্ডারিয়া, সুত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মেসে এসব ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের দাবি এরা স্থানীয় ছাত্রলীগের বা যুবলীগ নেতাকর্মীও হতে পারে।

গেন্ডারিয়া থানায় ধোলাইখালে অবস্থিত তিন ইউনিটের ছয়তলার একটি বাসায় সব ফ্লোরেই ছাত্রীরা থাকেন। মোহনা রাহমান বলেন, আমাদের এই ৬তলা বাসার সব ফ্লোরেই মেয়েরা থাকে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাসার মালিক সহ কিছু মানুষ আমাদের বলে যে আগামীকালের মধ্যে মেস ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে। আমরা বলছি, আমাদের অনেকেই টিউশন করাই, স্টুডেন্টের পরিক্ষা আছে, আমরা চাইলেও স্টুডেন্টের পরিবার যেতে দিবে না। আর এখন বাস, ট্রেন সব বন্ধ রাস্তা কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে এ দ্বায় কে নিবে? আর যেতেও তো অনেক টাকা ভাড়া লাগবে। তখন তারা বলেন, ঠিক আছে আপনারা বাসায় থাকেন কিন্তু আন্দোলনে যাবেন না। আর পরিবেশ শান্ত না হলে আস্তে আস্তে বাসায় চলে যাবেন।

মোহনা আরও বলেন, আমরা প্রথমে ভাবছিলাম পুলিশ কিন্তু তাদের সাথে ওয়াকিটকি, অস্ত্র, পোশাক আর কিছু লোকের চেহারা দেখে বুঝতে পারি ছাত্রলীগ হবে হয়তো। 

সুত্রাপুরের শিংটোলা বসবাসরত শিক্ষার্থী নাগিব বলেন, আমরা নয়জন থাকি। পুলিশের পোশাকসহ সিভিলে প্রায় ১৫ থেকে ২০জন লোকের একটা টিম আসে। আমাদের এসে বলেন, কালকে সকাল ৮টার মধ্যে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যাবেন। আমাদের আরেকটি টিম সকাল ১০টায় এসে খোঁজ নিয়ে যাবে। 

পুরান ঢাকার রোকনপুরে মেসে থাকা আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন,রাত ১১.৩০ এর দিকে ৫/৬ জন সিভিল ড্রেসে আমাদের বাসায় এসে সকালের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার হুমকি দেয়। আমার কাছে মনে হয়েছে ওরা পুলিশের নাম দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা এসেছে। অন ডিউটিতে থাকলে পোশাক থাকবে।পুলিশের তো ওয়ারলেস থাকবে।

আমার ৪ টা টিউশন বাসায় যাওয়া সম্ভব না। আর আমার বাসা অনেক দূরে‌। এখন বললেই ট্রেনের টিকেট ম্যানেজ করতে পারি না। বাসেও অনেক টাকা ভাড়া। আমিসহ মেসের মেয়েরা ভয়ে আছি যে এত রাতে আমাদের বাসায় আসছে। আমাদের মেস চিনে গেছে। ওরা আবারও আমাদের বাসায় আসে কিনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী জানান, বাড়িওয়ালা আমাদেরকে ফোন করে বলেন ,কাল সকাল আটটার মধ্যে বাসা খালি করে দিবা। তোমাদের কোনোকিছু হলে তার দায় আমি নিব না। পুলিশ আমাকে কল করে বলতেছে। পুলিশ ধরেও নিয়ে যেতে পারে।

জোবায়দা খানম নামে আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, রাত সারে এগারোটার সময় পুলিশ পরিচয়ে ছয়জন আমাদের বাসায় আসে। তারা সকলেই ছিলো সিভিলে। তাদের হাতে ছিলো না কোন ওয়ারলেস। আমাদের বাসায় এসেই তারা বলে সকালে যেন আমরা মেস ছেড়ে চলে যাই। পরে আমরা বলেছি এই মুহুর্তে আমাদের পক্ষে চলে যাওয়া সম্ভব না। আমাদের টিউশনি আছে। এ কথা বলার পরে আমরা যেন কোন ধরনের আন্দোলনে যেন না যাই গেলে সমস্যা হবে সেই হুমকিও দিয়ে গেছে তারা। যদি যাই তাহলে বিষয়টি নাকি ভালো হবে না। 

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সবকিছু তো আমার নিয়ন্ত্রণে না। আমাদের যতটুকু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে ততটুকুতে এখনো কেউ আঘাত হানতে পারি নি। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকগুলো মেসে অবস্থান করে। এতগুলো মেসের সন্ধান তো আমার কাছে নেই। তারপরও বিষয়গুলো আমি খোজ নিয়ে দেখছি।

তবে মেসে হানা দেওয়া এবং মেস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। এ বিষয়ে সুত্রাপুর থানার ডিউটি অফিসার মামুন মাহমুদ বলেন, আমাদের পুলিশ গেলে আমরা জানতাম। এধরনের কিছু জানা নেই। আর পুলিশ গেলে ইউনিফর্মে যাবে। পুনরায় গেলে থানায় খবর দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার রুহুল আমিন বলেন, কোতোয়ালি থানা এলাকায় শিক্ষার্থীদের কোন মেস তেমন নেই। আর এই ধরনের কোন খবর আসেনি। আমরা জানিনা। জানতে চাইলে লালবাগ জোনের ডিসি মো. মাহবুব-উজ-জামান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখতে হবে। আমি খোজ নিয়ে দেখছি।

মেসেঞ্জার/ইমরান/আজিজ