ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

কোটা সংস্কার মেনে নিয়েছে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন প্রত্যাহার

ময়মনসিংহ ব্যুরো

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৭ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ২১:৪৮, ২৭ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার মেনে নিয়েছে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন প্রত্যাহার

ছবি : মেসেঞ্জার

কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকারী ৭ সমন্বয়কারীরা সরকারের দেয়া কোটা সংস্কার মেনে নিয়েছে সেই সাথে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা করেছে।

শনিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি পার্কের মুক্ত মঞ্চে এক সংবাদ সম্মেলনে বাকৃবি'র সমন্বয়কারীরা এই ঘোষণা দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়কারীরা জানান, কোটা সংস্কার মেনে নিতে ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ বা কোনো চাপ তাদেরকে দেয়া হয়নি। কোটা সংস্কারের মূল দাবি পূরণ হয়েছে তাই শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

 সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়কারী মোঃ ইনান মিয়া, হাসিবুল হাসান, মাশশারাত মালিহা, প্রণব ঘোষ, মাজহারুল ইসলাম তুষার। বাকৃবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাতজন সমন্বয়ারীর মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। বাকি দুইজন দূরে থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি তবে তাদের সম্মতিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাসিবুল হাসান জানান, 'বিগত ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরির ৯ম-১০ম গ্রেডে সকল ধরনের কোটা বাতিন করে আইন পাশ করা হয় এবং পরবর্তীতে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হলে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং পুনরায় কোটা বহাল রাখার রায় জারি হয়। যার প্রেক্ষিতে ৬ই জুন ২০২৪ হতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরাও কোটা সংস্কার করার জন্য আন্দোলন শুরু করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছিলো। কিন্তু হটাৎ সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কে বা কারা ছুট করেই সহিংসতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে, সারা বাংলাদেশে এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে পরিণত করতে থাকে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এক পক্ষ তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেস্টা করে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের তাই-বোনের মত অনেক সহপাঠীদের হারিয়েছি।

আমরা রক্তের বিনিময়ে দাবি আদায় করার জন্য রাজপথে নামি নাই। যারা আন্দোলনে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গতীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

'প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমাদের বিশ্বাস কোন সাধারণ শিক্ষার্থী এমন হত্যাযঞ্জ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িত হতে পারে না। সরকারি স্থাপনায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারের উন্নয়ন মূলক স্থাপনায় হামলাকারীরা কোন সাধারণ শিক্ষার্থী হতে পারে না।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কখনোই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এর দায় কখনো নেয়নি এবং নিবেনও না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো জড়িত সকলকে তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আমাদের আন্দোলন কখনোই রাজনৈতিক আন্দোলন বা কোন সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিলো না।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেধার যৌক্তিক মূল্যায়নের জন্য কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করলেও সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সমন্বয়কদের প্রচেষ্টায় আমরা সেই সুযোগ দেইনি কিন্তু গর্বের সহিত বলতে চাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সহিংসতার ঘটনা বা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণ তাবে আন্দোলন করে এসেছি। অদ্যাবদি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে যাচ্ছে এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 'আমরা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিলাম আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সেই দাবি মেনে নিয়ে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করেছেন। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

সেই সাথে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আছে তাদেরকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এবং এসব পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য ও পরিবারের কোন এক সদস্যকে চাকরির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে অসহায় পরিবারের পাশে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

 আমরা চাই না তার কোন মায়ের কোল খালি হোক, আমরা শুনতে চাই না আর কোন  বাবা মায়ের  সন্তান হারানোর আর্তনাদ। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে ভবিষ্যতে যেন এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের সকলকেই সতর্ক থাকা উচিত।

এখনো অনেকেই বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে নতুনভাবে আন্দোলনের রূপ নিয়ে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিস করতে চাচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর কারো কোনো রাজনৈতিক ফায়দা ও স্বার্থ হাসিলের বলি হতে চাই না।

বাকৃবির প্রশাসন আমদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা কর্মীদের যারা আমাদের সাথে থেকে আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে।

বাকৃবির ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে যে সু-সম্পর্ক বিদ্যমান, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই তার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার সহ নিরাপত্তার দায়িত্বরত সকলে ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখতে সহযোগিতা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অপর সমন্বয়কারী ইনান মিয়া বলেন, 'আমরা বরাবরই শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন করে আসছিলাম। কিন্তু আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দেশব্যাপী নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের অনেক ভাই-বোন আহত ও নিহত হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা কারো অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে চাইনি।

 সরকার আমাদের কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে যে সমাধন করেছে, আমরা মনে করি তাতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে কিছু দাবি রয়েছে।

আমাদের দাবিসমূহ-

১। অনতিবিলম্বে হল খুলে দিতে হবে।

২। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণকে কোন ধরণের মামলা বা হয়রানি করা যাবে না।

৩। শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কোন ধরণের হয়রানি করা যাবে না।

 ৪। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও ক্যাম্পাস খোলার পর ক্যাম্পাসের নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মেসেঞ্জার/নজরুল/আপেল

×
Nagad