ছবি : মেসেঞ্জার
নাম রিফাত রশিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একই সাথে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের দল গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সক্রিয় সদস্য। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তিনি। তবে, এবার সেই রিফাত রশিদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-২২ সেশনের এক নারী শিক্ষার্থী।
এ অভিযোগের পর নানাবিধ হুমকি ধামকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানান উক্ত নারী। মেসেঞ্জারের হাতে আসা একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে উক্ত নারী শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিগত ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেন রিফাত।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ' গ্রুপে সমন্বয়ক রিফাত রশিদের ব্যাপারে পোস্ট করেন উক্ত নারী শিক্ষার্থী। এতে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় একাধিক নারীর সাথে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ করেন পোস্টদাতা।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ' আমার সাথে রিফাত রশিদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কে থাকা অবস্থায় সে আমাকে অসুস্থ করেছে এবং বারংবার আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। এমনকি নিজের পরিবার, নিজের বন্ধুবান্ধব, নিজের পলিটিক্যাল সার্কেলসহ র্যান্ডম মানুষজন এবং নিজের বিষয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করতেন তিনি।
উক্ত নারী আরো অভিযোগ করেন, আমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এবং আপত্তিকর মেলামেশা করেন রিফাত। এমনকি তার বেস্ট ফ্রেন্ডসহ একাধিক বান্ধবীর সঙ্গে তার শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ঘটনার প্রমাণ পাই আমি।'
এসব জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপারগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও পরবর্তীতে হুমকি দেন বলে জানান উক্ত নারী শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'আমার কাছে ধরা খেয়ে এক্সপোজ এড়ানোর জন্য আমাকে বিভিন্ন ভাবে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে রিফাত। এসময় সে আমাকে নানাবিধ হুমকি প্রদর্শন করেছে এবং পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়ে ইমোশনাল নাটকের আশ্রয় নিয়েছে।
এক্সপোজ এড়াতে নিজের রাজনৈতিক দলের বড়ো ভাই এবং সমন্বয়কের ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন উক্ত নারী শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ' আমাকে বুঝাতে ব্যর্থ হওয়ার পর রিফাত রশিদ অন্য দুজন সমন্বয়কের মাধ্যমে মৃদু হুমকি এবং ম্যানিপুলেশনের চেষ্টা করেছে। এবং পরবর্তীতে নেগোশিয়েট করার চেষ্টা করেছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সময় রিফাত রশিদ ও উক্ত নারী শিক্ষার্থীর কথপোকথনের কিছু স্ক্রিনশট মেসেঞ্জার প্রতিবেদকের হাতে আসে। এতে দেখা যায়, নারী শিক্ষার্থীটিকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে রিফাত রশিদ। এতে ব্যর্থ হওয়ায় অভিযোগকারী নারীর ব্যক্তিগত ছবি হুমকির আশ্রয় নেন রিফাত।
একটি খুদে বার্তায় রিফাত লিখেন, 'পোস্ট দেয়া তো সলিউশন না। সল্যুশন চাইলে সল্যুশন করি। সেইটা তো ফেসবুক পোস্ট দিয়ে হবে না। আপনি পোস্ট করবেন। আমি সব হারাইয়া আপনার ন্যুড ভাইরাল করবো। একটা ক্যাওয়াজ হবে।'
একটি খুদে বার্তায় রিফাত রশিদ লিখেন, 'ব্যপারটা আমি রিফাত এর ইন্ডিভিজ্যুয়াল ইস্যু না। আমি পোস্ট দেই, আপনি কই দেন বা আমি পদত্যাগ করি গোটা ব্যপারটা একটা ন্যাশনাল ইস্যু ক্রিয়েট করবে যেইটা চলমান গোটা যেই গণঅভ্যুত্থান সেইটার স্পিরিটেই একটা ধাক্কা খাবে!' এক্সপোজ পোস্ট করলে ব্যাপারটিকে ঘিরে আওয়ামীলীগ কাউন্টার ক্যু করতে পারে বলেও উক্ত নারী শিক্ষার্থীকে হুমকি দেন রিফাত রশিদ।
অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আরো জানা যায়, নারী ঘটিত কারণে প্রথম বর্ষে থাকাকালীন রিফাত রশিদকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের নিজ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বয়কট করেন। ক্লাস-পরীক্ষাবাদে বিভাগের অন্যকোন কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারতেন না রিফাত। অভিযোগের বিষয়ে রিফাত রশিদের সাথে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মেসেঞ্জার/নকীব/তারেক
