ঢাকা,  শনিবার
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা

জবিতে আর কোন ব্যক্তিপূজা হতে দেয়া যাবে না

জবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৮ অক্টোবর ২০২৪

জবিতে আর কোন ব্যক্তিপূজা হতে দেয়া যাবে না

ছবি : মেসেঞ্জার

"হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমরা ম্যুরাল বা নাম ফলক স্থাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি মেনে নিবো না। স্মৃতি রক্ষার্থে নাম ফলক থাকবে কিন্তু কোন স্কাচ বা ছবি না।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিক্ষার্ধীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন মঙ্গলবারের মধ্যে এই ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষরসহ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জমা দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা। এছাড়া দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের ম্যুরাল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমরা বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খালেদার জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। ফ্যাসিবাদ আমলে তার নামের যে নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই হতে পারে তার স্মৃতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনয হাঁটছেন স্বৈরাচার হাসিনার দেখানো পথে। হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বলে আমরা মনে করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন ব্যক্তিপূজা শুরু হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সব জায়গায় পরিবর্তনের যে হাওয়া লেগেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। আমরা আশা করেছিলাম ফ্যাসিবাদের পতনের নতুন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন তিনি ২৪ এর আন্দোলনের স্পিরিটকে (প্রেরণা) ধারণ করবেন। তবে ভিসি স্যারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে আমরা আশাহত হয়েছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিনি পূর্বের ফ্যাসিবাদের আমলের ভিসিদের পথেই হাঁটছেন।

এদিন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সাথে আলোচনা করেন। প্রক্টর বলেন, প্রশাসনিক ভবনের সাসনে ছোট নাম ফলক হবে, মূর্তির মত কিছু থাকবেনা। যার স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হচ্ছে, তিনি যদি জানেন, তার একটি স্মৃতি ফলক স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই তিনি নিজে কষ্ট পাবেন।

ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়ে জবির শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যুরাল সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এটা কোন ম্যুরাল নই। শুধু ছবি সম্বলিত নাম ফলক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এটা কোন মুর‍্যাল বা ভাস্কর্য নয়। এটা ছবি সম্বলিত ঘোষণা ফলক। 

প্রসঙ্গত, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসেবে রুপদান করে ততকালীন বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। তার একটি নামফলক ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। হাসিনা সরকারের আমলে তা ভেঙে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। নতুন নামফলক স্থাপন করে তা (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন ঘোষণা দেন তিনি।

তবে নামফলকে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি স্থাপনের সিদ্ধান্ত আসলে তা নিয়ে সমালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ১১ ফুটের ম্যুরালের পরিবর্তে ৮ ফুটের নামফলকসহ স্কেচ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন,ছবি বা ম্যুরালের যে রীতি তা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের তৈরি। নতুন করে ম্যুরালের মাধ্যমে ব্যক্তিভিত্তিক রাজনীতি আর চান না শিক্ষার্থীরা।

মেসেঞ্জার/ইমরান/তারেক