ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে জান শেখ হাসিনা। তবে, বেকায়দায় ফেলে যান আওয়ামী পন্থী লোকজনদের। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী ও আওয়ামী মদতপুষ্ট শিক্ষকদের বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা। যার কারনে শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না এসব শিক্ষকরা।
মেসেঞ্জারের অনুসন্ধানে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের মতে, একজন শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া ও নিজে পথপ্রদর্শন করা। অথচ এসব শিক্ষক নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলের অন্ধভক্ত ও সমর্থকের মত কাজ করেছেন। তারা যেন শিক্ষক নন একজন নামমাত্র রাজনৈতিক কর্মী!
জানা যায়, প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দুই অধ্যাপক রহমতুল্লাহ ও জামিলা আহমেদ চৌধুরীকে বয়কট করা হয়েছে। দুই প্রভাষক মো. আজহার উদ্দিন ভূঁইয়া ও প্রভাষক শাহরিমা তানজিন অর্ণিকে আন্দোলনের সময়েই বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা৷
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অন্তত ১৩ জন শিক্ষকের ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা৷ তাঁদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ও মো. আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন৷
বর্জনের তালিকায় আছেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক সুমন দাস, শবনম জাহান ও মো. মোশাররফ হোসেন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেদ বিন আমির, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. আফজাল হোসেন ও সামশাদ নওরীন, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার, অধ্যাপক মো. মুশফিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও মো. জামিল শরীফ৷
শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষকদের চলমান ব্যাচগুলোর ক্লাসে ও কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে না দেওয়ার বিষয়ে অনড়৷ এ বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছি৷ শিক্ষার্থীরা এখন সন্তুষ্ট এবং তারা নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিচ্ছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা ও মো. মনিরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান ও জিনাত হুদা, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাবের আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক শাহরিয়ার ও মারিয়া হোসাইন, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মুহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মিজ সুমাইয়া ইকবাল ও এ বি এম নাজমুস সাকিব, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাদিক হাসান এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকীর ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা৷
কলা অনুষদের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরী, তার বিরুদ্ধে এখনো আন্দোলন চলমান, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারজানা আফরীন, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম,সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সানা ও মোহাম্মদ ইমাউল হক সরকার, উর্দু বিভাগের ১ জন অধ্যাপক মো. মাহমুদুল ইসলাম, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের প্রভাষক মো. রাকিবুল হাসান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২ জন অধ্যাপক আবদুল বাছির ও অধ্যাপক মো. আবদুর রহিমের ক্লাসও শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন৷
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে চলমান পাঁচটি ব্যাচের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোসা. রেবেকা সুলতানা ও সহযোগী অধ্যাপক মন্দিরা চৌধুরী৷ নীল দলের এই দুই শিক্ষকের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার বিষয়টি গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন করে দর্শন বিভাগের একাডেমিক কমিটি৷
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই রেবেকা সুলতানাকে বর্জন করেছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ সরকার পতনের পর রেবেকা ও মন্দিরার বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে চেয়ারম্যান শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী বরাবর স্মারকলিপি দেন৷
জীববিজ্ঞান অনুষদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নীল দলের শিক্ষক মো. হারুনর রশীদ খানের ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷ মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আন্দোলন চলছে৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ. আজমল হোসেন ভূঁইয়া, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগের চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফরোজা শেলী ও অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামের ক্লাসও বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ওরফে লিটুর ক্লাস শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন । স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ফারিহা কাদির ও প্রভাষক মুহাম্মদ ইহসান-উল-কবিরের ক্লাসও বর্জন করা হয়েছে৷
চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলামসহ দুই শিক্ষক এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষকের ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ' কয়েকজন শিক্ষকের নামে প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্তের জন্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন এসব শিক্ষক সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা ডিনের সহয়তায় একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের বয়কট করেছে। কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
মেসেঞ্জার/নকীব/আজিজ