ঢাকা,  রোববার
২০ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

উনিশ বসন্ত পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নূর ইলাহী ইমরান, জবি

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ২০ অক্টোবর ২০২৪

উনিশ বসন্ত পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি : সংগৃহীত

২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয়। ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা আরো পুরোনো। 

১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে এ বিদ্যাপীঠের নামকরণ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সুদীর্ঘ দেড়শ বছরের ইতিহাস বাংলদেশের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

সময়ের বিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টি হাজারো বেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৩৮টি বিভাগ ও দুইটি ইন্সটিটিউটে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজারেরও বেশি, শিক্ষক রয়েছে ৭ শতাধিক। তবে মাত্রে সাড়ে সাত একর জায়গায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট হলো আবাসন ও ক্যাম্পাস। নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ও ক্যান্টিন সুবিধাও।

২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। প্রায় ২০০ একর জমিতে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। চার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও এখনো শেষ হয়নি প্রথ ধাপের কাজ।  তবে অনুমোদনের পর সাত বছর পার হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করার মাধ্যমে আবাসনসহঅন্যান্য সংকট সমাধানের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ আহম্মদ বলেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় এবার ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা থাকলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমার কাছেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে এই প্রতিষ্ঠান একটি ভালোবাসা ও আবেগের জায়গা। 

তিনি আরো বলেন, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করে সব সংকট ও সমস্যার অবসান ঘটিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রত্যেক জবিয়ানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক আস্থা, ভালোবাসা ও নিরাপদের জায়গা।

আরেক শিক্ষার্থী আইমুন আক্তার বলেন, শত সীমাবদ্ধতা নিয়ে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় দাড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন হতে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান ছিলো অনস্বীকার্য। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ পেরিয়ে বিশে পদার্পণ করলেও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অর্জন তা ঈর্ষনীয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নানা স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার স্থান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

তিনি আরো বলেন,  বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও, প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা, সুন্দর প্রশস্ত ক্যাম্পাস, আধুনিক গবেষণাগার সংকটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন, গবেষণায় পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে থাকে, সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়টি নানা অপূর্ণতার মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমার চাওয়া, আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়টি এই সমস্ত সংকট কাটিয়ে উঠে, সগৌরবে তার ঐতিহ্য নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে বছরের পর বছর।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  ড.রেজাউল করিম  এ বিষয়ে বলেন, ১৯ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কারণ বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। আমরা সকল কাজ শুরু করে দিয়েছি ,আসলে সবকিছু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমরা ইতিমধ্যে সকল পরিকল্পনা সেরে ফেলেছি, খুব শীঘ্রই অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। তবে কিছু কিছু সমস্যা আমাদের হাতের বাইরে যার বিকল্প পথও আমরা ভেবে ফেলেছি। আশা করি একে একে সকল সমস্যার সমাধান হবে।

মেসেঞ্জার/দিশা