ছবি : মেসেঞ্জার
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী মহাসম্মেলন। এই সম্মেলনে ভোর থেকেই সারাদেশের আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণ যোগ দেন। সম্মেলনটি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে, যেখানে দাওয়াত ও তাবলিগ, কওমি মাদরাসা এবং দীনের হেফাজতের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তির পোহাতে হয়েছে। সম্মেলনে আসা ব্যক্তিদের দ্বারা ঢাবির নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মল-মূত্রত্যাগ, ক্যাম্পাসে বাস পার্কিং, তীব্র যানজট সৃষ্টি, হল ও একাডেমিক বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
নারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তার অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে এসে মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়া তৌহিদি জনতার কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন একাধিক নারী শিক্ষার্থী। হেনস্তার শিকার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “ আমি আজ ক্লাস করতে এসে নিজের ক্যাম্পাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হলাম। আমি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ক্লাস শেষে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আসলে একদল হুজুর আমাকে উত্যক্ত করে।
উক্ত নারী শিক্ষার্থী আরো অভিযোগ করেন, শুধু আমি না। আমি একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারাও একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানতে পারি।
এদিকে ঢাবির আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ আমার হল গেটে (শামসুন্নাহ হল) দাড়িয়ে ছিলাম। কয়েকজন আমাদের লক্ষ্য করে মোল্লা লুঙ্গি উপরে ধরে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেন।
ভোগান্তিতে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
সম্মেলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। ঢাকা শহরের তীব্র জ্যামের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাহিক শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। জ্যামের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের বহন করে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসট্রিপ ক্যান্সেল করতে হয়েছে। এছাড়া মার্কেটিং, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ একাধিক বিভাগের পরিক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। নিজ ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়া জনতার ভিড়ে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক আচরণ ব্যহৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও একাডেমিক বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মল-মূত্রত্যাগ, খাদ্য উচ্চিষ্ট্য ফেলে দেওয়ার কারণে ক্যাম্পাসের পরিবেশ বেগতিক হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসের দোয়েল চত্ত্বর থেকে পলাশি মোড় পর্যন্ত শতশত বাস পার্কিং করা হয়েছে। যার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের অধীনে নয়, সেখানে পুলিশ অন ডে তে আমাদের না জানিয়ে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। আমরা ডিএমপিকে চিঠি দিবো এরপরে কোনো সম্মেলন হলে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নেয়।
আমাদের কাছে ক্যাম্পাসে বাস পার্কিং করার অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু আমরা স্পষ্ট না বলে দিয়েছি। রাত থেকেই মোবাইল টিম কাজ করতেছিল। সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছে, একসাথে শত শত বাস পার্কিং করা হয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতো পরিমাণ মানুষ ও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সক্ষমতার বাইরে ছিলো। আমাদের জনবল কম, কোনো একশন নিতে চাইলে সমাবেশে আসা লোকদের সাথে দাঙ্গা লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, তাবলিগ কওমি মাদ্রাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ। মহাসম্মেলনে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামরা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাবলিগ জামায়াতের দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিপক্ষে এই মহাসম্মেলন করছেন প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীরা।
মেসেঞ্জার/নকীব/তারেক