ছবি : সংগৃহীত
ভোলার চরফ্যাসনে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়েছেন গোলদার হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে তিনি বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান।
জানা যায়, গোলদার হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান আওয়ামী লীগের ক্ষমতার বলয়ে থেকে বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। এমনিকি তিনি একাধিক শিক্ষককে হেনস্ত করেন। আওয়ামী সরকারের সময়ে তিনি শিক্ষকদের জিম্মি করে হেনস্তা ও নানাভাবে হয়রানি করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে টিসি দেওয়ার হুমকি দেন শিক্ষক মাকসুদুর রহমান। তার এমন কর্মকান্ডে বিব্রত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান এর পদত্যাগ চেয়ে প্রতিবাদ জানালে তার হেনস্তার শিকার হন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় তিনি একটি অপশক্তির প্রভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ে নানা অপকর্ম।
ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, 'অন্যান্য শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত প্রধান শিক্ষক গত ৩১ ডিসেম্বর স্কুলের লাইব্রেরীতে আমাকে হেনস্তা করেন। আমাকে হুমকি দিয়েছেন স্কুলে না যেতে। আমি আগামীকাল স্কুলে যাবো। শুধু আমি না, তার ভয়ে শিক্ষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরও সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষকের মাকসুদুর রহমান অন্য একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। হঠাৎ একদিন শুনি তিনি আমাদের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে গোপনে যাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তারা সবাই তার লোক। ইচ্ছামতো ম্যানেজিং কমিটি তৈরি করে শিক্ষা বোর্ডকে দিয়ে অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতি করেছেন মাকসুদুর রহমান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনিয়ম করলেও তার ভয়ে শিক্ষকরা কিছুই বলতে পারেন না।
ওই বিদ্যালয়ের জমি দাতা সদস্য মো. রুহুল আমিন গোলদার জানান, ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারণে ক্ষতি হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার বলয়ে থেকে তিনি বিদ্যলয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছেন। ২০২০ সনে তিনি কাউকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ টি মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দেন।
এছাড়াও তিনি ২০২২ সনে বিদ্যালয়ের একটি টিন সেট পুরাতন ঘর ৪৩ হাজার টাকা বিক্রি করে ওই টাকা আত্মসাত করেছেন। ২০২৩ সালে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ পাঁচ লাখ টাকার চার লাখ টাকা একাই আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের পুরাতন বিল্ডিং বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. খলিলুর রহমান জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মতে ওই স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিয়ষটি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. খলিলুর রহমানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মেসেঞ্জার/সাইফুল/তুষার