ছবি: সংগৃহীত
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে সারাদেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে কিছু সন্ত্রাসী চক্র। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, মামলা-হামলা বানিজ্য, অবৈধ জবর দখল ও অন্যায়ভাবে অর্থ আত্মসাতে দেশব্যাপী ব্যপক ভাবে তৎপর এই সব সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ও প্রশাসনকে চাপে ফেলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফায়দা লুটে নেয়ার অপতৎপরতা চালাচ্ছে এসব সংঘবদ্ধ চক্র।
বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ছাত্র সমন্বয়কের এর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেও চাঁদাবাজি, রাহাজানি চলছে প্রতিনিয়ত। ৫ই আগস্টের পর এই ধরনের চক্রগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার সহ সকল জায়গাতে অবৈধ দখলদারিত্বের পায়তারা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি এমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ষড়যন্ত্র ও আক্রমণের শিকার হয় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্দান মেডিকেল কলেজ। অভিযোগ উঠেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থাকে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রে নামে এই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপ, যাদের নেতৃত্বে দিচ্ছেন বোরহান উদ্দীন ও লুতফর রহমান সানি নামের দুই ব্যক্তি। আর এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছে কৃষিবিদ গ্রুপের কতিপয় শীর্ষ কিছু অসাধু ব্যক্তি।
জানা গেছে, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রাস্টির চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের একজন নন্দিত শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তা, যিনি গত ৩১ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএর শিক্ষকতায় নিয়োজিত; উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যপকভাবে সমাদৃত এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও নর্দান মেডিকেল কলেজ, নার্সিংসহ আরো অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
সম্প্রতি মিথ্যা মামলা জড়িয়ে হয়রানির শিকার করা হয় তাকে। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হেনস্তা করে, নর্দান এডুকেশন গ্রুপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে দখল করতে গভীর ষড়যন্ত্র করে এই অসাধু চক্র। প্রফেসর আব্দুল্লাহর সামাজিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর হস্তান্তর ও ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহ এর মালিকানা প্রসঙ্গে একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। এরপর প্রফেসর আব্দুল্লাহ, তার পরিবার সন্তান ও তার অফিসের একাধিক নিরীহ কর্মকর্তার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া দেয়। সম্প্রতি দেশে চলমান মিথ্যা মামলা বানিজ্যের নামে যে হয়রানি, সেই হয়রানির শিকার হয় তারা।
মিথ্যা মামলা দিয়ে তার উপর চাপ সৃষ্টি করে তার কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করতে চক্রান্ত করে। প্রফেসর আব্দুল্লাহ, তার পরিবার ও তার অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে তারা কৌশলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো দখলের পরিকল্পনা করে। তারই ধারাবাহিকতায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও অফিসে এক এক করে তিনবার অতর্কিত হামলা করে অবৈধ দখলের চেষ্টা চালায় তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা - কৃষিবিদ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলী আফজাল ও তার সহযোগীরা। যার মধ্যে রয়েছে - মোঃ হারুন অর রশিদ, লোকিয়ত উল্লাহ, জুবায়ের আহম্মেদ ভুঁইয়া, মোহাম্মদ আলমগীর, আবুল বাশার মোঃ সালাহউদ্দিন, তারিকুর রব্বানি ভুঁইয়া। একের পর এক হামলা, মিডিয়া ষড়যন্ত্র, মামলা দিয়ে হেনস্তা করার সকল অংক মূলত কৃষিবিদ গ্রুপের আলী আফজাল ও তার দোসরদের কারসাজি।
একই সাথে তারা সহযোগিতা নিচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন কিছু ছাত্র নেতাদের, যে দলটি ইসলামিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, সে দলের কতিপয় গুটিকয়েক বিপথগামী ছাত্র নেতা তাদের দলের আদর্শের পরিপন্থি কাজ করছে; এসব নেতা দলটির আদর্শকে কলুষিত করে অবৈধ অর্থের লোভে জুলুম জালিয়াতি ও জবর দখলের ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত হয়েছে।
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ট্রেজারার ও আইবিএ শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল হক ও তার সহকর্মী আবু বকর সিদ্দীক। বোরহান উদ্দিন এবং লুৎফর রহমান সানি ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা। তারা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সে সময়ের ট্রাস্টি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শামসুল হক ও অন্যতম ট্রাস্টি আবু বক্কর সিদ্দিকীর সরলতার সুযোগে পুরাতন ট্রাস্টী বোর্ডের অর্ন্তভূক্ত হন।
প্রফেসর ডঃ শামসুল হক জানান, প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে উন্নতি করেছে তা এখন দৃশ্যমান এবং তার ঐকান্তিক চেষ্টায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। আইনগতভাবে প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ শতভাগ সঠিক থাকায় বারংবার অবৈধ দখলের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় উক্ত সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও বলেন, তারা আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছিল। উপযুক্ত বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের আরজি আদালত কর্তৃক বাতিল হয়ে যায়। আদালতে হেরে যাওয়ায়, সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জবর দখল করতে উদ্ধত হয় এই চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর স্বৈরাচারী দখলদারদের মত জঘন্য হামলা চালায় এই সন্ত্রাসীরা। এসময় কৃষিবিদ গ্রুপের একটি গাড়িতে চড়ে আসে হামলাকারী বোরহান উদ্দীন ও লুতফর রহমান সানি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যপক ভাঙচুর চালায়; যেখানে ঘটনাস্থলেই ২০ জন ছাত্র ও কর্মকর্তা গুরুতরভাবে আহত হয়।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আক্রমনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, এবং পাল্টা ধাওয়া দিলে সন্ত্রাসীদল পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের কাছে ধরা পড়েন সন্ত্রাসী বোরহান উদ্দিন ও লুৎফর রহমান সানিসহ কৃষিবিদ গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের যৌথবাহিনী ও পুলিশের কাছে সোপর্দ করে শিক্ষার্থীরা। কৃষিবিদ গ্রুপের গাড়ি জব্দ করে শিক্ষার্থীরা যা পরবর্তীতে থানায় পুলিশের হেফাজতে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় দখলের সকল পায়তারা ও ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত হয়ে, এর পরবর্তীতে তারা ভিন্ন পরিকল্পনায় নর্দান মেডিকেল কলেজ দখলের পায়তারা চালায়। অর্থের প্রলোভনে কিনে নেয় নর্দান মেডিকেল গুটিকয়েক শিক্ষার্থীকে। এরপরই নর্দান মেডিকেল দখলে নেয়ার নীল নকশা তৈরি করে এই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। এ বিষয়ে আমাদের গোপন অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে একটি নাম আনিকা আফরিন মুন। নর্দান মেডিকেল এর শিক্ষার্থী আনিকা আফরিন মুন এই সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। আনিকা আফরিন মুন এর পরিবারও এই চক্রের সাথে জড়িত।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একাধিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে নান প্রলোভন দেখিয়েছে কৃষিবিদ গ্রুপ। নর্দান এডুকেশন গ্রুপের কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলছেন। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, এই ধরনের বেআইনি কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
উল্লেখ্য, সকল প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন একটি গভর্নিং বডি কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং ২০১১ সাল থেকে নর্দান মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ।
মেসেঞ্জার/সোভা/জেআরটি