ছবি : মেসেঞ্জার
কেরাণিগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষরসহ তিন দফা দাবিতে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের বাকি দুই দাবি হলো- পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন অব্দি আবাসন ব্যবস্থা না হয় ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বুকে থাকর পরেও বছরের পর বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক দাবি শিক্ষার পরিবেশ, জীবনের নিরাপত্তা ও বাসস্থান থেকে বঞ্চিত। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এইবার হয়তো আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। কিন্ত দুঃখের বিষয় এখনো কোন দৃশ্যমান কাজ না দেখে আমরা অনশন এর মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হই।
গণ অনশনে থাকা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরিক্রমায় ২০০ একরের ২য় ক্যাম্পাস পাই। কিন্তু সেই ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন এর অগ্রগতি নেই । আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহীনীর হাতে হস্তান্তর করা। গতবছরের নভেম্বরে সচিবালয় ঘেরাও এর মতো কর্মসূচি দিলে সেখান থেকে স্পষ্ট বলা হয় প্রশাসন চাইলে সেনাবাহিনীর হাতে দিতে পারবে। কিন্তু ২ মাস হয়ে গেলেও ক্যাম্পাস এর কাজ হস্তান্তর হয়নি। আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শুনতে চাই না আর। দাবি না মানা প্রযন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শেখ বলেন, এই সরকার আমাদের রক্তের উপর গঠিত সরকার। এই সরকার থাকা কালিনী যদি আমরা আমাদের মৌলিক দাবি ২য় ক্যাম্পাস ও আবাসন সংকট সমাধান করতে না পারি আর কখনোই তা সম্ভব হবে না। আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
এদিকে এই গণ অনশন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ নানা ছাত্র সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
এবিষয়ে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম আব্দুর রাকিব বলেন, সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা আছি। কিন্তু ২ মাস পেরোলেও কাজ হচ্ছে, চিঠি দেয়া হচ্ছে এসব বলছেন। কিন্তু আমরা আর এটা দেখতে চাই না। সেনাবাহিনী, মন্ত্রণালয়, জবি প্রশাসন উপস্থিত হয়ে চুক্তি করে সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর না করলে আমরা এ গণ অনশন চালিয়ে যাবো।
জবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই সংগঠন থেকে সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর, অস্থায়ী আবাসনসহ নানা দাবি জানিয়ে এসেছি। এরপর সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার জন্য আন্দোলনও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার বিষয়টি ধীরগতিতে আগায়। ২ মাসের বেশি হয়ে গেছে। আজ শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে গণ অনশন পালন করছে। আমরা ছাত্র শিবির থেকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষন করছি। ভিসি স্যারকেও এই দাবি মেনে নেয়ার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ বরেন, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, আমাদের বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কাজই জবি প্রশাসন করতে পারে নাই। চিঠি চালাচালির ভিতরেই আছে। এছাড়া যারা ক্যাম্পাস প্রকল্পের দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের কোনো তালিকা করা হয়নি। তদন্ত করে করে ব্যবস্থা নেয়নি। যাকে সাময়িক ভাবে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে দুর্নীতি গ্রস্থ। তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নিশ্চিতভাবে জানাবো যে কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়া হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের গণ অনশন চলবে। আমরা আর এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয় ঘুরতে চাই না। এরআগে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু ফলাফল পাইনি।
সেনাবাহিনী কাজ হস্তান্তরের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। কাজ চলছে। আমাদের একটু সময় দিতে হবে। এসময় সাংবাদিকরা কতটুকু সময় লাগবে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, 'আমি কোনো সময় দিতে পারবো না। বললাম তিন দিনে, পরে লেগে গেল ৫ দিন। তখন আমার কথার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। শুধু বলব আমরা কাজ করছি।'
বিতর্কিত কর্মকর্তাকে নতুন করে পিডি দেয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, 'আমিরুল ইসলামে সাময়িকভাবে পিডি হিসেবে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি সেটি দেখবে। আমরা ব্যবস্থা নিব। দ্রুতই ইউজিসি থেকে তদন্ত কমিটি করার জন্য আমরা কাজ করছি।
মেসেঞ্জার/তুষার