ছবি : মেসেঞ্জার
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) গত ১২ জানুয়ারি গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা অর্ণব সিংহ রায়কে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঐসময় 'বিশৃঙ্খলা'র অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দপ্তরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তর, প্রক্টর অফিস এবং ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরে এই অভিযোগপত্র জমা দেন তারা।
অভিযোগপত্রের বিষয় জানতে দপ্তর প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা 'এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না' বলে জানান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাহফুজ অন্তর, মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শাহাদাত তানভীর রাফি, ফার্মেসী বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের সাদী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের মোহাম্মদ রাফি দ্বারা 'গণিত বিভাগের টিচার্স রুম ভাঙচুরের হুমকি, সাংবাদিকদের পা চাটা গোলাম বলে আখ্যায়িত এবং তাদের প্রাণনাশের হুমকির' মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।
এছাড়া অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্বেও হলের সামনে জ্বালাও পোড়াও, প্রশাসনিকভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি, সিনিয়র পেটানোর মনোভাব, গণিত বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের খেলায় মারামারির মূল হোতাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
পাশাপাশি অভিযোগপত্রে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিও জানান তারা।
অভিযোগপত্রের প্রেক্ষিতে গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী হুজাইফা হামিম বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য দূর করা। আইনের সুসংহত প্রয়োগ করা। কিন্তু এই ঘটনার পর মনে হচ্ছে নতুন করে একটি দল সাধারণ ছাত্র নাম ধরে সেই পুরনো ক্ষমতা প্রয়োগের খেলায় মেতে উঠেছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যেরকম ঔদ্ধত্য দেখা গেল, এর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যাবস্থা না নিলে সামনে আরও খারাপ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। বিচার নিশ্চিত করার নামে একটা মব জাস্টিস বলি বা আক্রমণ বলি, আমরা যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখলাম। যা হতাশাজনক।'
গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, 'গতকাল বাইরের বিভাগ থেকে কয়েকজন গণিত বিভাগের অভ্যন্তরে টিচার্স রুমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে বিভাগের শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে। এমনকি নানান পোস্টে শিক্ষকদের নাম ধরে উনাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয়েছে। একজন গণিত বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং যারা এই স্পর্ধা দেখিয়েছে তাদের বিচার এর আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি।'
গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ফরহাদুল ইসলাম নাঈম বলেন, 'গতকাল যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কখনো শিক্ষার্থীদের অনুকূলে থাকবে না। আমরা এখানে মারামারি দেখতে আসি নাই। কেউ যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তার বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। নিজের হাতে আইন তুলে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বেও কেউ মেনে নেয়নি, বর্তমানেও কেউ মেনে নিবে না।'
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, 'আমার কাছে একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছে। এটা যদি শৃঙ্খলা বিরোধী কিছু হয় তাহলে প্রক্টর স্যারের কনসার্ন লাগবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঐরকম মন্তব্য করতে পারবো না।'
অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, 'আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা একটা মিটিং করব তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব।'
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, 'আমি এখন ঢাকায় আছি। এই মূহুর্তে অভিযোগপত্র না পাওয়ায় আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আগামীকাল অফিসে গিয়ে অভিযোগপত্র দেখে মন্তব্য করতে পারব।'
মেসেঞ্জার/অনন/তুষার