ছবি : মেসেঞ্জার
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) "Understanding Climate Change & Climate Finance: National & International Perspective" বিষয়ক দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সম্মেলন কক্ষে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
আইকিউএসি সেল এর পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দীন এর সভাপতিত্বে এবং আইকিউএসি সেল এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. আমিনুল ইসলাম টিটোর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান এবং ট্রেজারার প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ।
প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়। এটি আমাদের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এজন্য আমাদের নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জলবায়ু তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
উপাচার্য তার বক্তব্যে দেশে থ্রি-হুইলার ব্যাটারির অপরিকল্পিত লেড সংগ্রহ: পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির উপর একটি ভিডিও তৈরি করে সবার উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন এবং বলেন, থ্রি-হুইলার ব্যাটারির পুরাতন লেড সংগ্রহের অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি। বিশেষ করে বয়েলিং বা গলানোর মাধ্যমে লেড নিষ্কাশনের ভয়াবহতায় আমরা পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে পুরাতন ব্যাটারি থেকে লেড সংগ্রহের জন্য ব্যক্তি বা কারখানাগুলো অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ব্যাটারির ভেতরের লেড অ্যাসিডসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকায় এটি পুড়িয়ে বা গলিয়ে লেড সংগ্রহ করলে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। সেই বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা বাতাসকে দূষিত করে। এটি শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
উপাচার্য বলেন, ব্যবহৃত অ্যাসিড ও লেডযুক্ত পদার্থ সরাসরি মাটিতে বা পানির উৎসে ফেললে নদী, খাল ও ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ হয়। লেড মাটিতে মিশে গেলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং ফসলের মাধ্যমে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে। লেড একটি মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরে প্রবেশ করলে ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি কিডনি, লিভার এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে, কারণ লেড গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতি নিশ্চিত করা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে বা গলিয়ে লেড সংগ্রহ বন্ধ করতে কড়া আইন প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাটারি ব্যবসায়ীদের সঠিক নিয়ম মেনে লেড রিসাইক্লিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যাটারি পুনঃব্যবহার বা রিসাইক্লিংয়ের জন্য নির্ধারিত প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। আমরা যদি এখনই উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আসুন, সবাই মিলে সচেতন হই, সচেতন করি এবং নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলি।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, আমি আশা করি আজকের কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান মতামত ও সুপারিশের মাধ্যমে আমরা জলবায়ু অর্থায়নের আরও কার্যকরী মডেল তৈরি করতে পারব। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সফলতা বয়ে আনবে। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং কর্মশালার সফলতা কামনা করেন।
কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির আইকিউএসি সেল এর অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবদুল মাসুদ, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম সংস্থান ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ। প্রশিক্ষণটির স্পন্সর ছিলেন পল্লী কর্ম সংস্থান ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বিকেল ৫ টায় উক্ত ওয়ার্কশপ শেষ হয়।
মেসেঞ্জার/তুষার