ঢাকা,  সোমবার
১০ মার্চ ২০২৫

The Daily Messenger

‘ধর্ষণই একমাত্র অপরাধ যেখানে ভুক্তভোগীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়’: অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ৯ মার্চ ২০২৫

‘ধর্ষণই একমাত্র অপরাধ যেখানে ভুক্তভোগীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়’: অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান

ছবি : মেসেঞ্জার

সারাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিকটজনদের মধ্যেই ধর্ষক লুকিয়ে থাকে। তাই ছোটবেলা থেকে নারীদেরকে ধর্ষকের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এখন দেশে ধর্ষণের যে মহাযজ্ঞ চলছে অনেকেই বলছে নারীর বেপর্দার কারণে তা হচ্ছে। পর্দার কথা যদি বলতে হয় তাহলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দার বিধান রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের বিচার নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে ধর্ষকমুক্ত করতে হবে।'

রোববার (৯ মার্চ) বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ শেখ এবং আরাফ ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় গোল চত্বরে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন শিক্ষকরাও।

এসময়  শিক্ষার্থীরা 'দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত', ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না', 'একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর', 'আবু সাঈদের বাংলায় ধষর্কের ঠাই নাই', 'চব্বিশের বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই' সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জোহরা মীম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পড়াশোনার সত্ত্বেও এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মন-মানসিকতা অনেক নীচু। তারা নারীদেরকে বিভিন্নভাবে বুলিং করে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ভিতরে এক এবং বাহিরে আরেক। এধরনের মানুষকে প্রশাসন চিহ্নিত করুক। যারা তারা ভবিষ্যতে পটেনশিয়াল রেপিস্ট হিসেবে না গড়ে ওঠে। প্রশাসনকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুক যেন নারীদেরকে নিয়ে কটুক্তি করার আগে তাদের কলিজা কেঁপে ওঠে।'

এসময় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জুলফা আক্তার বলেন, 'আমরা সবাই আছিয়ার ধর্ষণের কাহিনি জানি। এমন অনেক ধর্ষণ হয় যার খবর আমরা জানি না। আমাদের সামনে আসে না, অনেকে ভয়ে প্রকাশ করে না। এভাবে ধর্ষন বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্ষকদের উপযুক্ত সাজা না হওয়া। ১০ হাজার ২০ হাজার টাকা দিয়ে, হুমকি ধামকি দিয়ে তারা আবার মুক্ত আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দাবি, আমরা ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, প্রকাশ্যে এনে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। যেন সামনে কোন ধর্ষক কাউকে ধর্ষণের কথা চিন্তাও না করতে পারে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে ধর্ষকদের প্রতিহত করতে হবে।'

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা বলেন, 'গভীর শোক এবং প্রতিবাদের ভাষাকে একত্র করার জন্য আজকে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। গত কয়েকদিন ধরে আইনশৃঙ্খলার অবনতির করাল গ্রাসের শিকার হচ্ছে নারীরা। আজকে একটা নারী-শিশুও ধর্ষকের হাত থেকে নিরাপদ না। ছোট শিশু আছিয়া জীবনকে বোঝার আগেই তার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ধর্ষকেরা।

তিনি আরো বলেন, 'ম্যোরাল পুলিশিংয়ের নামে যে নারী হেনস্থা তা কোনোভাবেই কাম্য না। আমরা এই রহস্যের সমাপ্তি চাই। সুন্দর সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশ চাই।'

নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শামীমা নাসরিন বলেন, 'দেশব্যাপী নারীর প্রতি যে সহিংসতা চলছে তারই প্রতিবাদে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। প্রতিবাদ করলেই যদি সমস্যা সমাধান হতো তাহলে হয়তো আমাদের এখানে দাঁড়াতে হতো না। এটার মানে স্পষ্ট যে আমাদের দেশের মানুষ হোক নারী বা পুরুষ কোনোভাবেই নিরাপদ নয়।'

কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

মেসেঞ্জার/অনন/তুষার