ঢাকা,  শনিবার
০৬ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

অনুমতি ছাড়াই বিদেশে চলছে তুফান

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৩ জুলাই ২০২৪

অনুমতি ছাড়াই বিদেশে চলছে তুফান

ছবি : সংগৃহীত

এবারের ঈদে পাঁচটি সিনেমার মধ্যে রায়হান রাফি পরিচালিততুফাননানাভাবেই আলোচনায় উঠে এসেছে। ছবিটি মুক্তির প্রাক্কালে ১৯ সংগঠনের করা অভিযোগেও বিদ্ধ হয়। আলফা আই থেকে এর কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন- ‘বাংলাদেশে যত নিয়মকানুন তা মেনেই নির্মিত হয়েছে তুফান। তথ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, সেন্সর বোর্ডের সব নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে বলেই আমরা সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছি।

নানা চড়াই-উতড়াইয়ে ছবিটি মুক্তি পেয়ে সিঙ্গেল স্ক্রিনসহ সিনেপ্লেক্সে ছয় কোটি টাকার মতো নিট ব্যবসাও করেছে। দেশ পেরিয়ে বিশ্বের ১৫টি দেশেও মুক্তি পেয়েছে তুফান। ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা আমদানি-রপ্তানির কমিটিকে পাশ কাটিয়ে বিদেশে মুক্তি দিয়েছেন তুফান। আর এতে করে রাজস্ব ফাঁকির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিও সামনে এসছে।

জানা গেছে, গত ২৫ জুন আমদানি-রপ্তানি কমিটির এক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। পরবর্তীতে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে জুলাই সাইফুল ইসলাম (উপসচিব) স্বাক্ষরিত একটি পত্র (স্মারক নং ৪৪৩) জারি করা হয়। জারিকৃত পত্রটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএফডিসি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রদর্শক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিষদসহতুফানপ্রযোজক আলফা আই-এর কর্ণধার শাহরিয়ার করিম ভূঁইয়া বরাবর পাঠানো হয়।

এতেবাংলাদেশি চলচ্চিত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি গ্রহণপ্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪-এর উপানুচ্ছেদ ১১.- বিধান উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়- ‘বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, গান, নাটক, ছায়াছবি, প্রামাণ্য চিত্র ইত্যাদি অডিও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট, সিডি ডিভিডি ইত্যাদি ফর্মে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে রপ্তানি করা যাবে।

ইদানিং বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বিদেশে প্রদর্শিত হচ্ছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কিন্তু তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি ব্যতিত চলচ্চিত্রগুলো বিদেশে প্রদর্শিত হচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এমন যেকোনো দেশে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি (ঘঙঈ) গ্রহণপূর্বক যথাযথভাবে রপ্তানি করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব্যাপারে চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানি কমিটির সদস্য প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি অনেকেই আমদানি-রপ্তানি কমিটিকে পাশ কাটিয়ে দেশের বাইরে সিনেমা মুক্তি দিচ্ছেন। এটার অর্থ হচ্ছে সরকারকে বিব্রত করা। দেশকে রাজস্ব হতে বঞ্চিত করা। কমিটি অবশ্যই এসব অনিয়ম দেখার এখতিয়ার রয়েছে। সেই এখতিয়ার থেকেই গত ২৫ জুনের বৈঠকে এই অনিয়ম নিয়ে আপত্তি জানাই। ওই বৈঠকে তুফানের প্রতিনিধিও ছিলো। তিনি বিদেশে চালানোর প্রসঙ্গটি অস্বীকার করেছেন। পরে প্রমাণ দিলে সেই আলোকে জুলাই সকলের জ্ঞাতার্থে চিঠি দিয়েছে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তবে ভারতে চালানোর অনুমতি পেলেও অন্যান্য দেশে যে অনিয়মের মাধ্যমেতুফানচলছে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কঠোর ভূমিকা না দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। তারা ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। এর অর্থ হচ্ছে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে।

বিষয়টি নিয়ে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রালয়ের উপসচিব (চলচ্চিত্র) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতে সিনেমাটি মুক্তির জন্য অনুমোদন নিয়েছে। তবে অন্য কোনো দেশে সিনেমাটির প্রদর্শন হচ্ছে কিনা আমরা জানি না। অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অন্যদেশে চালানোর অনুমতি না নিয়ে থাকলে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বৈঠকে যাবেন বলে এড়িয়ে যান।

আমদানি-রপ্তানি কমিটির অনুমতি ছাড়া বিদেশে তুফান প্রদর্শন এবং দেশ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে কিনা জানতে ছবিটির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের মুঠোফোনে বুধবার বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে তিন বার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সিনেমা সংশ্লিষ্টগণ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে সকলের সামনে দিয়ে একটি সিনেমা দেশের বাইরে চলছে আর মন্ত্রণালয় বলছে তারাকিছুই জানে না’, তাহলে আমরা আর কী বলি? মন্ত্রণালয় যদি চায় রাজস্ব তাদের দরকার নেই, তাহলে আমাদেরও নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।

বিষয়টি নিয়ে প্রযোজক আরশাদ আদনান বলেন, ‘তুফানমুক্তির শুরু থেকেই তারা যেভাবেপ্রিয়তমাকে টার্গেট করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, এরপর এই সিনেমা নিয়ে আমি কিছু বলবো সেটা আমার দিক থেকে ঠিক হবে না।

তুফানের প্রযোজক আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেড। এর ডিজিটাল পার্টনার চরকি আর ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশন পার্টনার এসভিএফ।

নব্বইয়ের দশকের ঢাকার এক গ্যাংস্টার নিয়ে তৈরি হয়েছে তুফানের চিত্রনাট্য। শাকিব খানের সঙ্গে আছেন ঢাকার নাবিলা কলকাতার মিমি চক্রবর্তী।

মেসেঞ্জার/মুমু