ছবি : সংগৃহীত
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের ওপর ছুরি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝালকাঠির শরিফুল ইসলাম শেহজাদ সাত মাস আগে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে প্রবেশের পর সেখানকার এক বাসিন্দার আধার কার্ড ব্যবহার করে ভারতীয় সিম কেনেন তিনি। এরপর সেখান থেকে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান তিনি। মঙ্গলবার মুম্বাই পুলিশ সাইফের হামলাকারী বাংলাদেশি নাগরিকের বিষয়ে নতুন এসব তথ্য জানিয়েছে।
রোববার ভোরের দিকে মহারাষ্ট্রের থানে জেলা থেকে ৩০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ডাকাতির উদ্দেশে সাইফ আলি খানের বাড়িতে গভীর রাতে হানা দেওয়ার তিন দিন পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে সাইফ আলি খানের বাসায় ঢুকে পড়েন শরিফুল। পরে সেখানে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বলিউডের এই অভিনেতাকে ছুরিকাঘাত করেন তিনি। এতে তার শরীরে অন্তত ছয়টি জখম হয়।
মুম্বাই পুলিশ বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নাম পাল্টে বিজয় দাস রাখেন শরিফুল। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে তার গতিবিধি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
• ডাউকি নদী পেরিয়ে ভারতে
পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সাত মাস আগে ডাউকি নদী পেরিয়ে শরিফুল ইসলাম শেহজাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে প্রবেশ করেন। পরে সেখানে যে সিম কার্ডটি ব্যবহার করছিলেন তা পশ্চিমবঙ্গের খুকুমনি জাহাঙ্গীর শেখ নামে নিবন্ধিত। সিম কার্ড নেওয়ার জন্য শরিফুল পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা খুকুমনি জাহাঙ্গীর শেখের আধার কার্ড ব্যবহার করেছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গে ঘুরেছেন শরিফুল। এমনকি নিজের জন্য একটি আধার কার্ড তৈরি করার চেষ্টাও করেন তিনি। যদিও তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তিনি বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং চাকরির সন্ধানে ভারতে এসেছেন। ভারতে প্রবেশের জন্য তিনি মেঘালয়ের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ডাউকি নদী পাড়ি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। সেখানে বিজয় দাস নামে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেন তিনি।
• নথির প্রয়োজন নেই এমন চাকরি নেন শরিফুল
পশ্চিমবঙ্গে কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর চাকরির সন্ধানে মুম্বাইয়ে যান তিনি। পরে কোনও কাগজপত্র জমা না দিয়েই কাজ করতে পারবেন, এমন চাকরির খোঁজ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি এই নাগরিককে থানে এবং ওরলি এলাকায় হোটেল ও গৃহস্থালির কাজ পেতে সহায়তা করেছিলেন অমিত পান্ডে নামের স্থানীয় এক ঠিকাদার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সাইফের এই হামলাকারী বলেছিলেন, তিনি কলকাতার বাসিন্দা।
তবে তার কল রেকর্ড পরীক্ষা করার সময় কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কয়েকটি নম্বরে কল করার তথ্য পেয়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার অ্যাপ ব্যবহার করেছিলেন তিনি।
পরে মুম্বাই পুলিশ অভিযুক্ত এই বাংলাদেশির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ সময় তার ভাই ফোনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তাকে শরিফুলের স্কুল সার্টিফিকেট পাঠাতে বলা হয়। পুলিশের কাছে শরিফুলের এক ভাই তার সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেন। এই সার্টিফিকেটে তিনি যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক তা নিশ্চিত হয় বলে জানিয়েছেন মুম্বাই পুলিশের এক কর্মকর্তা।
মেসেঞ্জার/তারেক