ছবি: মেসেঞ্জার
উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন -অনেকটা এমনই স্বপ্ন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর পথচলা। আর এই পরিবর্তন ঘটাবে যুবসমাজ, সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের বিস্তার। চেঞ্জ মেকার রা কাজ করে যাচ্ছেন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে। “বদলে দিবো নিজেকে,বদলে দিবো পৃথিবী” এই স্লোগান নিয়ে তাদের নিরন্তর এগিয়ে চলা ।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা Sustainable Development Goal (SDG) হলো জাতিসংঘ ঘোষিত বেশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্য যার মাধ্যমে বিশ্বের কোন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হবে না,মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবীকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৭ টি।এর মধ্যে আছে দরিদ্র বিমোচন,খাদ্যের অভাব দূর করা,সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা,পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা,জলবায়ু পরিবর্তন রোধ,প্রত্যেক প্রানীর জীবনকে আশংকামুক্ত রাখার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য।
ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব সজীব খন্দকার তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, “আমরা কাজ করছি সমাজে চলমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। আমরা জানি,যুবসমাজই পারে বর্তমান সময়কে সুন্দর এবং ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করতে। তরুণরা কেবল একটি দেশের নাগরিক নয়,বিশ্ব নাগরিক। তাই বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলকে একতাবদ্ধ হতে হবে। আর এর জন্য যুবদের দক্ষ হতে হবে আর আমরা সেই দক্ষ ও দায়িত্বশীল যুবসমাজ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি এবং নিজেদের একটি যুববান্ধব সংগঠনে রূপান্তর করেছি”
২০১২ সালে কিছু উদ্যমী সেচ্ছাসেবী সমাজের মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন যার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের সহযোগীতা করা যায়; যার মাধ্যমে অসহায় মানুষদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করা যেন সম্ভব হয় এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার পুরণ করা যায়।সেই বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৫ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিয়ে বরিশাল জেলায় তাদের কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেন এবং তাদের প্রথম প্রজেক্ট পথশিশুদের ঈদের পোষাক বিতরণ যার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত অবহেলিত শিশু নতুন পোষাকে ঈদ উদযাপন করে।
সমাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই সকল সেচ্ছাসেবীরা জনসহযোগীতা,আশ্রায়ণ,দূর্যোগে সহযোগীতা,জনসচেতনতার মতো উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেয়।এর দ্বারা দেশের আনাচে-কানাচে অনেক সেচ্ছাসেবী তৈরি হয় যারা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।তাই ২০১৬ সালে গোটা বাংলাদেশে সেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে বিভিন্ন জেলায় তাদের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ।এই কমিটির সদস্যরা তার নিজ জেলার সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
প্রতিষ্ঠাতা সজীব খন্দকার বলেন,“বাংলাদেশে তরুন এবং শিশুদের কথা গুলো বলার জন্য জায়গা খুবই কম এবং তাদের অধিকার বলার এবং শোনার জায়গটা খুবই কম । আইওয়াইসিএম এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে সব তরুন এবং শিশুরা সমান ভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং আমি সকল তরুন এবং শিশুদের নিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কাজ করছি। প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন গঠন করার আগে থেকেই আমি এবং আমার সদস্যরা সেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছি” বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় আলাদা আলাদা ভাবে টিম গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।জেলা টিমগুলো তাদের জেলায় দূর্যোগে সাহায্য,জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বৃক্ষায়ন ,দরিদ্রদের সহায়তা,অসহায়দের ঈদ উপহার বিতরণ ও পথশিশুদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া বেশকয়েকটি প্রজেক্টও-শিশু অধিকার, বনায়ন, জলবায়ু ,এসডিজি এবং ইয়ুথ ফর ইয়ুথ। ২০১৮সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা টিম ৬০জন শিশুর পড়াশোনা সহ প্রাসঙ্গিক যাবতীয় খরচ বহন করছে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। করোনা এই মহামারি তে থেমে নেই সংগঠনটির কাজ করোনা প্রকোট বাড়ার সাথে সাথে ২০১৯ সাল থেকে করোনা মহামারী তে তারুণ্যের পদক্ষেপ নামে একটা ইভেন্ট এর মাধ্যম হতদরিদ্রের নিয়মিত খাবার বিতরন করছে সংগঠনটি, ২০২১ সালে পুরো জুলাই মাস জুড়ে তারা বাংলাদেশে ১৫ টি জেলায় প্রায় বিশ হাজার মাস্ক বিতরন করছে।আগামী ২০২৫ সালকে' শিশু ও যুব' বর্ষ ঘোষনার জন্য তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ১৩ বছরে নানা কার্যক্রমের অংশ হয়েছেন প্রায় ১২ লাখ মানুষ।
ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর কার্যক্রম কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়।বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক সেচ্ছাসেবী তাদের রয়েছে যারা নিজ নিজ স্থান থেকে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর বাংলাদেশস্থ ঢাকা জেলা কমিটি প্রতিনিধি আরও জানান, তারা খুব দ্রুত শিশু অধিকার সনদ অলিম্পিয়াড আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং এই বিষয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশ - এর কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর কো ফাউন্ডার লাবিবা সুলতানা জানান, “ বাংলাদেশ এর নারী সমাজের গুটি কয়েকজন ছাড়া সমাজে কাজ করার সুযোগ পান না।স্বনির্ভর হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হতে পারেন না বিভিন্ন কুসংস্কার এর কারণে যারা গ্রাম বা মফস্বল এ থাকেন।আমি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকলের যোগ্যতা দেখা হবে,সমাজের কাজে সকলেই অংশ নিতে পারবে,লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না আর নারীরা চিরাচরিত কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে এসে একটি সুস্থ জীবন গ্রহণ করবে।আমি এবং আমার সংগঠন বাল্য বিবাহ মুক্ত ও কিশোরী র প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করনে কাজ করছি।
২০৩০ সালের মধ্যে ২৫ লাখ নারী ও কিশোরীর জীবন দক্ষমতা ও তাদের অধিকার রক্ষায়
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে তাঁর আইওয়াইসিএম ।তারা এমন একটি বাংলাদেশ চায় যেখানে আর কোন শিশু পথে থাকবে না।বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে শিশু ও যুব বান্ধব দেশ।
বর্তমানে আইওয়াইসিএম এর যে জেলা গুলোতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে জেলাসমূহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, নীলফামারি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম , নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশের সব জেলাতে নিজেদের কাজের বিস্তার করা এবং শিশু তরুণদের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে শিশু-যুব বান্ধব করে তোলা
সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে।তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন সম্মাননাও অর্জন করছে। আইওয়াইসিএম বরিশাল জেলা ইউনিট সদস্য রাবেয়া বশরী মিনা মিডিয়া এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা শিশু সাংবাদিক নির্বাচিত হন। সেই বছরই আইওয়াইসিএম ফাউন্ডার সজীব খন্দকার জুনায়েদ Planned Parenthood Federation South Asia Regional Office (IPPF SARO) এর আয়োজনে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) এর সহযোগিতায় ব্যাংককে পাঁচ(৫) দিনের ইয়ুথ কনসালটেশনে অংশগ্রহণ করেন।এছাড়া সার্ক তরুন সম্মেলনে আইওয়াইসিএম কে উপস্থাপন করেন তিনি।২০১৮সালে পোলেন্ড এবং ২০১৯সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে তরুনদের পক্ষ হয়ে আইওয়াইসিএম প্রতিনিধিত্ব করেন। সংগঠনটি
আইওয়াইসিএম প্রকল্প: বর্তমানে চলমান প্রকল্প শিশু ও যুবকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলি হল: শিশুদের জন্য যুব, জলবায়ু বিচার এখন, এসডিজির জন্য প্রচারণা, আমার শরীর আমার অধিকার,। বাংলাদেশ ইয়ুথ ফর অ্যাডাপ্টেশন, মাইন্ড কেয়ার এবং লাইফ স্কিলস ফর ইয়ুথ।
* সংস্থাটি পুরষ্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছে
বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২১
* ইউনিসেফ বাংলাদেশ মীনা মিডিয়া পুরস্কার:২০০৯,২০১৩,২০১৪,
* গ্লোবাল ইয়ুথ সিম্পোজিয়া এবং অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩। সেরা যুব সংগঠন!
২০২৪ গ্লোবাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড।
সংগঠনটির মূল লক্ষ্য মানবাধিকার ও মানবউন্নয়নে কাজ করে যাওয়া।
মেসেঞ্জার/শাহেদ