ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচারে ডা. নিকুঞ্জ বিহারীর সাফল্য

যশোর প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১৯ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৭:১০, ১৯ আগস্ট ২০২৪

সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচারে ডা. নিকুঞ্জ বিহারীর সাফল্য

ছবি : মেসেঞ্জার

সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন গাইনী বিভাগের চিকিৎসকরা। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া গর্ভবতী নারীদের মধ্যে বিকাশ হওয়া একটি বিরল মেডিকেল অবস্থা। এমন রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তারা। কেননা রোগীর অস্ত্রোপচার মানেই ২০ ব্যাগেরও বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়া রোগীর মৃত্যুঝুঁকি থাকে।

কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিতে রক্তপাত ছাড়াই সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচার করে সাফল্য অর্জন করেছেন যশোরের গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম তিনি এমন পদ্ধতিতে অস্ত্রোপাচার করে সাফল্য অর্জন করেছেন বলে জানান।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানিয়েছেন, গত ১৫ আগস্ট যশোর শহরের কিংস মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাহাবুব হোসেনের স্ত্রী নীরা বেগমকে (২৫)। গর্ভবতী অবস্থায় তার প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়েছিলো।

ভর্তির দিনই রোগীর প্রথম সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন গাইনী অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার। এর দুই দিন পর ১৭ আগস্ট দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর গর্ভফুল অপসারণ করেন তিনি। রক্তপাত ছাড়াই বিকল্প পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের কারণে রোগীর পরিবারের লোকজন দারুণ খুশি হয়েছেন।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানান, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলো একটি মারাত্মক জটিল অবস্থা। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের জরায়ুর ওপরে গর্ভফুল থাকে। আর প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে, ফুল একদম নিচের দিকে চলে এসে গর্ভফুলটি জরায়ুর মুখে লেগে থাকে। রোগীর জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে ওঠে এটি।

তিনি আরও বলেন, এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার করাও তুলনামূলকভাবে অধিক ঝুঁকিসম্পন্ন। সন্তান প্রসবের সময় মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কারণ যখন সার্ভিক্স খোলে তখন এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেননা প্লাসেন্টা খুব শিগগিরই জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফলে রোগীর মারাত্মক রক্তপাত ঘটে, যা শিশুকেও প্রভাবিত করে।

ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানান, এই রোগীর অস্ত্রোপচারে নিজস্ব চিন্তা-চেতনা থেকে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। পদ্ধতি প্রয়োগে রক্তপাতবিহীন রোগীর অস্ত্রোপচারে সফলতা এসেছে। তবে এক্ষেত্রে দুইবার রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়।

প্রথম অস্ত্রোপচারে জরায়ু ও গর্ভফুল ভিতরে রেখে শুধু সন্তান বের করে আনা হয়। এরপর চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভবতী ফুল বেরসহ বাকি কাজটুকু করা হয়েছে।

তার জানামতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রক্তপাতবিহীন সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচার তিনিই প্রথমবার করেছেন।

প্রসূতির স্বামী স্বামী মাহবুব হোসেন জানান, তার স্ত্রী (নীরা বেগম) গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে একাধিক গাইনী সার্জনের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হওয়ার পর চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে কেউ ঝুঁকি নিতে চাননি।

সর্বশেষ ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের কাছে আনা হয়। অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা সেবায় তার স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ। রক্তপাতবিহীন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসক সকলকে অবাক করে দিয়েছেন। এতে তারা অনেক খুশি হয়েছেন।

মেসেঞ্জার/বিল্লাল/আপেল

×
Nagad