ঢাকা,  সোমবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ পেল ভারত

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২৬ জুন ২০২৪

আপডেট: ২২:২৭, ২৬ জুন ২০২৪

সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ পেল ভারত

ছবি : সংগৃহীত

টাঙ্গাইল শাড়ির পর এবার সুন্দরবনের মধুর আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বহীনতা বা উদাসীনতার কারণে এককভাবে এ সনদ নিয়েছে দেশটি।

অথচ সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের অধীনে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের পণ্য হিসেবে মধুর জিআই সনদ পায়নি বাংলাদেশ।

বুধবার (২৬ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘সুন্দরবনের মধু এখন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মধুর জিআই সনদ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ পেতে কী করতে হবে সেই বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সেই অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ির বিষয়টির সুরাহার হওয়ার আগে নতুন করে সুন্দরবনের মধু জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। এটি আরও উদ্বেগের বিষয়।

তিনি বলেন, গত ১৬ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগের একটি টুইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ ভারতের। এরপরই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে জিআইর সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এ ইস্যুতে দুই দেশের ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়াতে আইনি কাঠামো তৈরি করা উচিত।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদের জন্য আবেদন করেছিল। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ভারত।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবনের বেশিরভাগ ভূখণ্ড বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে। অতএব বাংলাদেশই সুন্দরবনের মধু আহরণকারী দেশ। বছরে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টন মধু বন থেকে আহরণ করা হয়। কিন্তু সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মূলত সরকারের গুরুত্বহীনতার কারণে এ সনদ বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়েছে।

সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১টি জিআই পণ্য তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় সুন্দরবনের মধু অন্তর্ভুক্ত নেই।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের মধুকে জিআই সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু গত সাত বছরে এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের প্রশাসনিক অবহেলার কারণে এটি অর্জিত হয়নি যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা।

সিপিডি বলছে, জিআই সনদের জন্য পণ্যগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ এবং পর্যাপ্ত একটি তালিকা করা দরকার। এছাড়া একটি আইনি কাঠামো করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেধাস্বত্ত আইনকে পরিপালন করা এবং দেশের পণ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা ও ২০১৫ সালের জেনেভার লিসবন আইনের সদস্য হতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত উভয়ই জেনেভা আইনে পরিপালন করলে সমস্ত আন্তঃসীমান্ত জিআইগুলোর জন্য আইনের অধীনে যৌথ আবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি সহজ হবে।

এছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে কোনো বৈঠক হলে সেখানে অবশ্যই দুই দেশের পণ্যগুলোর জিআই সনদ নিয়ে আলোচনা তোলার জন্য জোর পরামর্শ সিপিডির। 

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের মধু নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। যাতে উভয় দেশই এর সুফল পেতে পারে।

তিনি বলেন, জিআই সনদ পাওয়ার পর সেই পণ্যের বিপণন সঠিকভাবে না করা হলে তা লাভজনক হবে না।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর জিআই সনদ না পেলে সেগুলোকে কখনোই নিজেদের পণ্য বলে দাবি করা যাবে না। পণ্যগুলোকে জিআই সনদের তালিকাভুক্ত করা না হলে তা অন্যরা নিয়ে যাবে।

কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর কোনো সংস্কৃতি যদি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, তাহলে সেই পণ্য ওই অঞ্চলের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কোনো পণ্য তাই জিআই পণ্য হলে এর একটি মর্যাদা প্রাপ্তি ঘটে। এর একটি বাণিজ্যিক গুরুত্বও আছে।

জিআইয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনির্দিষ্ট এলাকার পণ্যের প্রসার, এর গুণগত মান বৃদ্ধি এবং নকল রোধ করা। এভাবে মান অক্ষুণ্ন হলে পণ্যের বাজার বাড়ে, এলাকার বাইরে এমনকি বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য হয়ে ওঠে।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম উইভারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য জিআই সনদ পেয়েছে।

এ সংবাদ বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের পক্ষে টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য জিআই সুরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়।

মেসেঞ্জার/আপেল