ছবি: মেসেঞ্জার
দুবাই এখন ভ্রমণ পিপাসুদের স্বর্গরাজ্য! মধ্যপ্রাচ্যর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক নগরী তাঁর চাকচিক্য বরাবরের মতই পর্যটকদের কাছে টানে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গড়ে উঠা এই মহাযজ্ঞের মহানগরী যতটা না সুন্দর দিনে তাঁর চেঁয়েও বেশি সুন্দর রাতে, পর্যটকরা এই নগরীর মোহে পড়ে একে রাতের শহর বলেও আক্ষ্যা দিয়েছেন। জেলে পল্লী থেকে শতাব্দীর সেরা শহরে গড়ে তুলতে সবছেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যাপার ছিলো ভিনদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর শতভাগ নিশ্চিত করে থাকে দেশটির শাসকেরা।
দু'ঋতুর এই মরুরদেশে শীতের আগাম বার্তায় দেশটিতে বাড়ছে পর্যটকদের ভীড়। অবকাশ যাপনে বছরের এই সময়টাতে দেশটিতে বাড়তে থাকে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা। দেশটির ইউনিয়ন ডে উদযাপনেও শহরগুলোর নানান ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে কর্তৃপক্ষ।
দুবাইয়ের বিমানবন্দর সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে, বছরের শেষের দিকে যা আরো বাড়বে বলে আশাকরা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে। বিশেষ করে গৃষ্ম প্রধান দেশে শীতের আগমনের বার্তা যেন অতিথি পাখির ন্যায় পর্যটকদের কাছে টানে।
বর্তমানে দুবাইয়ে চলছে বৈশ্বিক মেলা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এতে স্থান পায় সারা বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দর্শনীয় স্থাপনার প্রতিকৃত এর পাশাপাশি তাঁদের মুখরোচক খাবার, পণ্যদ্রব্য, বিলাশবহুল পণ্য। এর পাশাপাশি থেমে থেমে চলতে থাকে বিভিন্ন দেশের স্ব স্ব সংস্কৃতিক পরিবেশনা ও সার্কাস। এক কথায় প্রতিবছর ছয় মাস ধরে চলতে থাকা বৈশ্বিক এই মেলায় আপনি পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন নিমিষেই।
তবে দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য বৈশ্বিক এই মেলায় এ বছর শুধু নামেই অংশগ্রহণ দেশটিতে অবস্থানরত তৃতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের! এখানে প্রতিদিন হাজারো ভিনদেশি পর্যটকদের ভীড়ে থাকেন বাংলাদেশিরাও তবুও নেই নিজস্ব প্যালিভিয়নে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ। গত কয়েকবছর অংশগ্রহণ না থাকলেও এবছর অন্যদেশের প্যালিভিয়নে ভাড়া নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যাবসায়ী।
এ বিষয় নিয়ে দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তহতে দুবাইয়ে ঘুরতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভিনদেশি পর্যটকরাও এমন আয়োজনে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে নিজস্ব প্যালিভিয়নে অংশ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
গ্লোবাল ভিলেজ ছাড়াও উন্মুক্ত করা হয়েছে শারজাহ সাফারি, দুবাই মিরাকল গার্ডেন। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গভীরতম কৃত্রিম সুংমিংপুল। যেখানে সাতারের পাশাপাশি পর্যটকরা পানিতেই বিভিন্ন ক্রিড়া বিনোদনে অংশগ্রহণ ও রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণের অভিজ্ঞা নিতে পারবে।
শীতের এই মৌসুমে নিজদেশের অতিমাত্রায় ঠাণ্ডা এড়াতে বিশেষত শীত প্রধানদেশ ইউরোপের পর্যটকরা ছুটি কাটাতে এখানে বেশি ভীড় জমায়। তাঁদের আকর্ষনের অন্যতম কৃত্রিম স্থাপত্য হলো ‘দুবাই পাম জুমাইরাহ’ জুমেরা কৃত্রিম দ্বীপ, জাজিরাসহ বিভিন্ন আইচল্যান্ড সমূহ।
বর্তমানে দুবাই তাঁদের অর্থনীতি ও স্থাপত্যর পাশাপাশি প্রযুক্তিকেও শীর্ষে আরোহণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁরই ধারাবাহিকতায় মাঙ্গলে স্যাটেলাইট প্রেরণ, চঁন্দ্রাভিযান প্রেরণ এর পাশাপাশি জ্ঞান চর্চায় পৃথিবীর সর্বোবৃহৎ লাইব্রেরি ‘শেখ মুহাম্মদ লাইব্রেরি’ স্থাপন করার পাশাপাশি দুবাই ফিউচার মিউজিয়াম স্থাপন করছে। যা জ্ঞান পিঁপাষু ও রহস্যপ্রিয় পর্যটকদের জ্ঞান ক্ষুদা মিটানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মনে করেন দুবাইয়ের যুবরাজ প্রিন্স শেখ হামদান বিন মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম।
পর্যটকদের কাছে রহস্যের অন্যতম বিষয় হলো অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতে সম্পর্কে জানা। ঐতিহাসিকদের বিবরণ ও আলামত থেকে অতীত সম্পর্কে জানলেও, ভবিষ্যতে কি ঘটতে চলেছে বা ঘটবে বিজ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিজ্ঞানিরা। তবে ভবিষ্যতের ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দুবাই ফিউচার মিউজিয়াম।
তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য এবছর বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ভিসা জটিলতার কারনে বাংলাদেশি পর্যটক নেই বল্লেই চলে। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভ্রমণ ভিসার সুযোগ নিয়ে অনেক বাংলাদেশি কাজের সন্ধানে এসে অনেকেই কাজ না পেয়ে অবৈধ অধিবাসী হয়ে পড়েন। এতে দেশটিতে বাংলাদেশিদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ভ্রমণ ও সাধারণ কর্মী ভিসা জটিলতা নিরসনে দেশটিতে থাকা দুটি বাংলাদেশি মিশনকে আরব আমিরাতের সারকারের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান ব্যাবসায়ী নাসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশিদের এ দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অনুশাসন মেনে চলারও পরামর্শ দেন।
সবমিলিয়ে দুবাইয়ে গগনচুম্বী স্থাপনা, মরুর ধূসরতা ও রাতের চাকচিক্যতা দেশটিতে নিরাপদে পর্যটকদের বিচরণ পৃথিবীর মিলনস্থলকে জমজমাট করে তুলেছে। পর্যটকদের সরব অবস্থানের ফলে বিভিন্ন দেশের বণিকদের সাথে বাংলাদেশি বণিকরাও এখানে বাণিজ্যিক এক কর্মযজ্ঞ তৈরী করতে সফল হয়েছে।
ইউনিয়ন ডে এবং নববর্ষের আয়োজনকে ঘীরে দুবাইয়ে পর্যটকদের এমন পদচারণা ও উৎসবের আমেজ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন দেশটির বাসিন্দা ও পর্যটকরা।
মেসেঞ্জার/আশরাফুল/তারেক