
ক্যাপশন: ঢাকার চিকিৎসক দল চীনের কুনমিং চাংশুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম, কুনমিং-এ নিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. খালেদ, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। -টিডিএম।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আওতায় চীনের কুনমিং-এ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা সেবা উন্মুক্ত করেছে চীন সরকার। ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে চায়না ইস্টার্নের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে প্রথম দলটি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কুনমিং চাংশুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম, কুনমিং-এ নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. খালেদ, ইউনান প্রাদেশিক পররাষ্ট্র দফতরের মহাপরিচালক ইয়াং শাওচেং, ইউনান স্বাস্থ্য কমিশনের উপ মহাপরিচালক ওয়াং জিয়াঙ্কুন এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসমুহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
তাদের সাথে চিকিৎসক, সাংবাদিক, এবং ট্যুর অপারেটরদের একটি দলও কুনমিং সফর করছেন। চীন সরকারের উদ্যোগে চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পর্যটন বিষয়ক তথ্য বিনিময় ও প্রচারের উদ্দেশ্যে আসা এই দলটিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য যৌক্তিক খরচে এবং স্বল্প সময়ে উন্নত চিকিৎসার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
এছাড়া, এর ফলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়বে এবং পারস্পারিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন এবং অচিরেই কুনমিং বাংলাদেশিদের জন্য আধুনিক চিকিৎসার একটি অন্যতম গন্তব্য হিসাবে গণ্য হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এছাড়া ইউনান প্রাদেশিক পররাষ্ট্র দফতরের মহাপরিচালক ইয়াং শাওচেং চিকিৎসা পর্যটক এই দলটিকে চির বসন্তের নগরি কুনমিং-এ স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এবং ইউনানের জনগণের ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে চিকিৎসা সহযোগিতার এই অনন্য উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পরদিন ১১ মার্চ সকালে রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং ট্যুর অপারেটর প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে ইউনান ফার্স্ট এফিলিয়েটেড হাসপাতাল এবং ফু-ওয়াই কার্ডিওভাস্কুলার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশ থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
এসময় তিনি দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করেন এবং বাংলাদেশের রোগীদের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম ফু-ওয়াই কার্ডিওভাস্কুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশি তিন শিশুকে উপহার প্রদান করেন এবং তাদের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জনাব মো. তৌহিদ হোসেন এর চীন সফরকালে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশি বাংলাদেশিদের জন্য অপেক্ষাকৃত কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কুনমিং-এ বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা সেবা উন্মুক্তকরণের প্রস্তাব চীন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে চীন সরকার কুনমিং-এর তিনটি প্রধান হাসপাতাল এবং পরে বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের অনুরোধে কুনমিং বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতালসহ চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে।
এর মধ্যে কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফার্স্ট এফিলিয়েটেড হাসপাতাল এবং ইউনান ফার্স্ট পিপল’স হাসপাতাল দুটি সাধারণ হাসপাতাল, যেখানে সাধারণত সকল রোগের উন্নত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে, ফু-ওয়াই কার্ডিওভাস্কুলার হাসপাতাল ও ইউনান ক্যান্সার হাসপাতাল দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেখানে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
এখন থেকে বাংলাদেশ হতে চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশীরা সরাসরি এই সকল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক ওয়ার্ডে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নিতে পারবেন এবং রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। এই সকল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক ওয়ার্ডে বাংলাদেশি নাগরিকরা চীনা নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন বলে হাসপাতালগুলোর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
আশা করা যাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে কুনমিং-এ বাংলাদেশিদের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ আবারিত হওয়ায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি চীনের কুনমিং সফর করবেন এবং বাংলাদেশ ও ইউনানের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পারিক সম্প্রীতি বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এবং ইউনানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বানিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ চিকিৎসা পর্যটন সহজিকরণের লক্ষ্যে কুনমিং ও বন্দর নগরি চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ঢাকা ও কুনমিং-এর মধ্যে একাধিক ফ্লাইট চালুর জন্য সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মেসেঞ্জার/সাইদুল/তুষার