যাদের উপর ভর করে দেশের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কৃষিভিত্তিক জীবনব্যবস্থায় যাদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, দেশের রেমিট্যান্স অর্জনে যাদের সীমাহীন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ রয়েছে, যারা বাংলাদেশকে নিয়ে সমৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্ন দেখে অবিরত; তারাই আমাদের জাতির সম্পদ, দেশ ও জনগণের বন্ধু।
অন্যদিকে ইউটিউবার কারা? ইউটিউবে যতসব কনটেন্ট দেখানো হয় কিংবা আমাদের সামনে আসে কিংবা যে সকল কনটেন্ট জনপ্রিয়তা পায় তার মধ্যে কত সকল আমাদের প্রয়োজনে আসছে? আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য কাজে এসেছে কিংবা তরুণ প্রজন্মের মানস গঠনে ভূমিকা রেখেছে? দেখা যাচ্ছে এ ধরনের সৃজনশীল কিংবা গঠনমূলক কনটেন্টের সংখ্যা তুলনামূলক বিবেচনায় খুবই কম। সঙ্গত কারণে ইউটিউবারদের ব্যাপারে বিশাল জনগোষ্ঠীর এক ধরনের এলার্জি রয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টাকে তারা নেতিবাচকভাবে দেখে থাকতে অভ্যস্ত। আবার দেখা যায়, ক্রিয়েট কনটেন্টে শিক্ষণীয় কার্যক্রম একেবারে নগণ্য।
ইউটিউবারদের নিয়ে তাহলে আলোচনা কেন? আপনারা নিশ্চয়ই অবগত রয়েছেন, একটি বিশেষ শ্রেণি গোষ্ঠী রয়েছে যারা সুযোগ পেলেই বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় উঠেপড়ে লেগে যায়। আবার অনেকেই রয়েছেন যারা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোতে অভ্যস্ত। তারা মনে করে দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটালেই ঐ সকল দেশে তাদের সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ পাবে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপটি দেশের বাইরে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগন্ডা সৃষ্টি করে এক ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে, শুধু চিহ্নিত করলেই চলবে না। অন্যদেরকে এদের ব্যাপারে অবহিত করতে হবে।
দেখা যায়, বিশেষ একটি শ্রেণি রয়েছে যারা বিদেশিদের সামনে কথা বলার সুযোগ পেলে দেশের বিরুদ্ধাচারণ করে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা প্রার্থনা করে। আবার বিদেশিদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চরিত্র দেখা যায়। বিদেশিরা কখনো নিজ দেশকে নিয়ে কটুক্তি করে না, অন্যদের সামনে দেশকে সুউচ্চ অবস্থানে রাখতে তৎপর থাকে। আবার বাংলাদেশি যারা বিদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে প্রচার
প্রচারণা চালায় তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজগুলো করে থাকে। আবার যারা সরকারবিরোধী গ্রুপে অবস্থান করে তাদের সঙ্গে অপপ্রচারকারীদের একটি যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই যোগসাজশের হাত ধরেই ইউটিউবাররা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়।
সম্মানিত পাঠক, আপনারাই খেয়াল করবেন, ইতিবাচক কন্টেটের তুলনায় নেতিবাচক কন্টেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে প্রবল। এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ইউটিউবে ভিউ এর হিসাব যদি দেখেন তাহলে দেখা যায় সৃষ্টিশীল কিংবা সৃজনশীল কন্টেটের ভিউ এর তুলনায় জগাখিচুড়ি কন্টেটের ভিউয়ের হিসাবগত সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। অর্থাৎ মানুষের নজরের উপর নির্ভর করে ইউটিউবাররা কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। সংবাদপত্রে খেয়াল করলে দেখবেন, নেতিবাচক সংবাদগুলোকে বেশি হাইলাইট করে সংবাদ পরিবেশিত হয়ে থাকে। সঙ্গত কারণেই সাংবাদিকগণ নেতিবাচক খবরগুলোকে বেশিগুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে থাকে। ইউটিউবে যে বিষয়গুলো গুরুত্বহীন হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোই সাংঘাতিকভাবে ভিউ পাচ্ছে। আবার সৃষ্টিশীল কর্মগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও অনেকাংশে কম। সে কারণেই ইউটিউবে ভিউ দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা কোনোভাবে মানানসই হবে না।
এক শ্রেণির ইউটিউবার রয়েছে যাদের মূল কাজই হচ্ছে তথ্যের অপলাপ সৃষ্টি করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এই ইউটিউবারদের কার্যক্রম যে দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ব্যাপারটি তা নয় বরঞ্চ দেশের বাইরে তাদের কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারকে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। তাদের মূল কাজই হচ্ছে বিদেশিদের মনে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা, জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে রাজনৈতিকভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। সে জন্যেই তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যারা রাজনৈতিক কনটেন্ট তৈরি করে ভুল তথ্যের অপলাপ সৃষ্টি করে বিদেশি বন্ধুদের মনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে তাদের পিছনে শক্তিশালী মদদদাতা রয়েছে। নিশ্চয়ই শক্তিশালী মদদদাতারা সরকারি দলের বাইরে অবস্থান করে। তবে মদদদাতাদের খুঁজে বের করা জরুরী। মদদদাতারা যদি এ দেশীয় হয় তাহলে এক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসা যায়। আর মদদদাতাদের সঙ্গে যদি বর্হিবিশ্বের যোগাযোগ থাকে তাহলে বিভিন্ন আঙ্গিকের সমন্বয়ে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় মদদদাতাদের উস্কানিতে দেশ বিরোধীদের ইউটিউবে মিথ্যা কনটেন্ট তৈরি অব্যাহত থাকবে।
তবে এ কথা পরিস্কারভাবে বলা যায়, দেশের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে, দেশকে অন্যদের নিকট খাটো করার ক্ষেত্রে যারা তৎপর থাকে তারা এ দেশের শত্রু। উল্লেখযোগ্য প্রমাণ সহকারে দেশের শত্রুদের চিহ্নিত করে সাধারণ জনতার সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। যাতে করে শত্রুদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তাদের চরিত্র সম্পর্কে এ দেশের জনগণ সচেতন ও সজাগ হয়ে যায়। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের যারা ক্ষমতায় দেখতে চায়, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি যারা আবির্ভাব ঘটাতে চায় তারাই মূলত দেশের বিরুদ্ধে অনবরত গুজব ছড়াতে ব্যস্ত।
কোনো ধরনের সঠিক তথ্য উপাত্ত ছাড়াই দেশে একবার গুজব সৃষ্টি করা হল যে বাংলাদেশ শিগগিরই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থায় উপনীত হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ন্যায় দেউলিয়া হয়ে যাবে। পরবর্তীতে কী দেখা গেল? বাংলাদেশ কী দেউলিয়া হয়েছে? হয়নি। তবে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনব পদ্ধতিতে বুদ্ধিজীবী সেজে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এ গ্রুপটি খুবই মারত্নক ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি দেওয়া শুরু করেছে। ২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তাপ শুরু হয়েছিল, বিশেষ করে ঢাকায় তিনটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। এর মধ্যে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। এ ধরনের পরিস্থতির মধ্যে ইউটিউবাররা সুযোগ বুঝে সরকারের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে এনে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। এসব বিনিয়োগকারীদের নিবৃত করতে কতিপয় ইউটিউবাররা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়েও অপপ্রচারে লিপ্ত হতে পারে পক্ষটি। মোদ্দা কথা হচ্ছে, দেশের শত্রু হচ্ছে কতিপয় ইউটিউবাররা। এদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে এবং অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সাধারণ জনগণকে সচেতন ও সাহসী করে তুলতে হবে। আবার যারা স্বাধীনতাবিরোধী, দেশের পরাজিত শত্রু তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক, আবার সরকার বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত হয়ে সাধারণ জনতাকে বিভ্রান্ত করবে ইউটিউবারদের সহায়তায় এটাও স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এদের প্রতিহত করতে সচেতনতা ও সাহসিকতার বিকল্প নেই।
লেখক: চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মেসেঞ্জার/আল আমিন