ছবি: মেসেঞ্জার
চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসব একুশে বইমেলা -২০২৪। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে বই পড়ুয়া পাঠক ও লেখকেরা ভিড় জমান বইমেলা প্রাঙ্গনে। বই এবং বইয়ের ভিতরকার গল্প নিয়ে বছরের বাকি সময় আলোচনা চললেও ফেব্রুয়ারি মাস এলেই তা যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে এবারসহ নিকট অতীতের বইমেলা যেন দেখছে মুদ্রার ওপিঠ! বিশেষ করে বইয়ের পাঠক হওয়ার চেয়ে বর্তমান ‘শো-অফ’ এর দুনিয়ায় যেন সবাইকেই লেখক হতে হবে আগে।
অথচ ভালো একজন প্রকাশক কিংবা লেখকের নিকট লেখালেখির আগ্রহের কথা বললেই বলতে শুনেছি ‘লেখক হওয়ার আগে ভালো পাঠক হতে হবে, আপনি যদি বই লিখতে চান তাহলে আপনাকে পড়তে হবে, পড়তে এবং পড়তে হবে। এরপর আপনি লেখক হতে পারবেন।‘ কিন্তু বর্তমান এই শো-অফ’ এর দুনিয়া যেন এসব থোড়াই কেয়ার করছে!
আমরা জানি, বই আমাদের মনোজগতে আলোড়ন তোলে খুব সহজে। বই আমাদের অনুপ্রাণিত করে ভিন্নভাবে ভাবতে। কিন্তু এবারের বইমেলায় প্রকাশিত সকল বই কি মনোজগতে আলোড়ন তুলতে পারবে? কিংবা সাহিত্যের মানের বিচারে কতোটা যুক্তিসঙ্গত এসব বই প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।
এসব নিয়ে বলার জন্য আমি হয়তো কেউ নই। দেশের অনেক বড় বড় বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন এসব ভাবার, সেখানে আমি কেবল একজন ক্ষুদ্র থেকেও অতিক্ষুদ্র পাঠক কেবল। কিন্তু পাঠক হয়েও যখন এমন কিছু উদাহরণ দেখি বইয়ের পাতায় কেবল সাহিত্যের নামে পাঠকের সাথে রসিকতা করা হচ্ছে তখন তা একজন পাঠক হিসেবেই লজ্জার।
‘সাহিত্যিক’, ‘লেখক’ ‘প্রাবন্ধিক’ শব্দগুলির মাহাত্ম্য বোঝার জন্য সাহিত্যের ছাত্র/ছাত্রী হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং একজন ভালো পাঠক মাত্রই জানেন এসব বিশেষণ নামের আগে দেয়ার জন্য কতোটা বিষদ জ্ঞান আমাদের ধারণ করতে হবে, জানার পরিধির ব্যপকতা থাকতে হবে। কিন্তু এবারের বইমেলা যেন বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে, পাঠক নয়, ভদ্রসমাজে লেখক হিসেবে পরিচয় দেয়াই যেন লজ্জার!
সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে বলছি এমন অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক আমাদের বাংলা সাহিত্যেই রয়েছে, যারা মৌলিক গদ্য-পদ্য রচনা না করেও বাংলা সাহিত্যের অবদানের জন্য অলঙ্কৃত হয়েছেন এবং থাকবেন যুগের পর যুগ।
সজ্ঞানে বলছি, নব্য এই লেখক সমাজের উপর আমার কোন আক্ষেপ নেই! আমার আক্ষেপ কেবল সেসব লেখকদের প্রকাশকদের নিকট, যারা অর্থের বিনিময়ে নিজেদেরকেই যেন বিক্রি করে দিচ্ছে বারবার। কলুষিত করছে বাংলা সাহিত্যকে।
আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। বাংলা ভাষা ও এর মাধুর্য নিয়ে আমাদের তাই গর্বেরও শেষ নেই। কিন্তু সেই ভাষার সাহিত্য নিয়ে এমন অবমাননা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ট্রল কোন সত্যিকারের পাঠক বা ভদ্র সমাজের কাম্য নয়।
তাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগেই প্রকাশক এবং সংস্কৃতিমনা সাংবাদিকদের নিজেদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে, না হলে সেই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন সৈয়স ওয়ালীউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের (শষ্যের চেয়ে টুপি বেশি) মতো করেই বলতে হবে “সাহিত্য থেকে লেখক বেশি।
লেখক: মোহাইমেনুল নিয়ন, পেশায় একজন মিডিয়া কর্মী
মেসেঞ্জার/হাওলাদার