ঢাকা,  বুধবার
৩০ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

‘তামাকের ব্যবহার কমানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর কার্যকর উপায় কর বৃদ্ধি’

ড. প্রকৌশলী মাসুদা সিদ্দীক রোজী

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৩০ মে ২০২৪

আপডেট: ২০:২৪, ৩০ মে ২০২৪

‘তামাকের ব্যবহার কমানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর কার্যকর উপায় কর বৃদ্ধি’

ড. প্রকৌশলী মাসুদা সিদ্দীক রোজী, ছবি : সৌজন্য

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যায় তামাক ব্যবহারজনীত সৃষ্ট মারাত্মক রোগের কারণে। ধূমপান না করেও গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে প্রতিনিয়ত পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হন এমন মানুষের সংখ্যা সামগ্রিকভাবে মোট ধূমপায়ীর সংখ্যার চেয়েও বেশি।

অপরদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নিম্নমুখী চাপ, প্রত্যাশার চেয়ে কম দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কঠোর ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপসহ নানা সমস্যাবহুল সময় পার করছে এখন বাংলাদেশ। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে করে তামাক ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি সুরক্ষা থাকবে অধূমপায়ী ব্যক্তিরাও। 

গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৫ বছর বা বেশি) তামাক ব্যবহার করে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে পরোক্ষ ধূমপানের আগ্রাসণে।  বিশেষ করে পরোক্ষ ধূমপানের ভয়ংকর আগ্রাসনের কবলে রয়েছে গর্ভবতি নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে গর্ভপাতের - মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এমনকি সন্তান ভূমিষ্ট হবার পরও এর প্রভাব থেকে যেতে পারে, যেমন- শিশুর কম ওজন হওয়া, জন্মের সময় নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা এমনকি শিশুর মৃত্যু।

টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্যমতে দেশে প্রতি বছর তামাকজাতদ্রব্য সেবনের কারণে ফুসফুসে-মুখগহ্বরের ক্যানসার,হৃদরোগ ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি এই অকাল মৃত্যু রোধের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। 

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী,২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা,যা একই সময়ে এ খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি) চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার এবং ক্ষয়ক্ষতি জনস্বাস্থ্য,অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তাই সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তামাক পণ্যে কর বৃদ্ধি অতি প্রয়োজন। 

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা অতি জরুরি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে সিগারেটের মূল্য অত্যন্ত কম, অন্যদিকে বিড়ি খুবই সস্তা মূল্যে বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা বলা হলেও বেশীরভাগ সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিন দিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে সেখানে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য দিন দিন সহজলভ্য হয়ে পরেছে। তাই মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের ব্যবহারের হার কমিয়ে আনার জন্য সিগারেট, বিড়ির মূল্য নিম্ন স্তরে ৪৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৬৭ টাকা থেকে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১৩ টাকা থেকে ১৩০  এবং প্রিমিয়াম পর্যায়ে ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা বৃদ্ধি করা হলে করে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.৮০% হবে। শুধু তাই নয়, দেশে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং ১০ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। উল্লেখিত হারে তামাক পণ্যে কর আরোপ করা হলে দেশে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা বাগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

তামাকের কারনে যাতে আর একটি প্রানও না ঝরে যায় সেজন্য আমাদের সকলকে নিজ অবস্থান থেকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। হতে হবে যথেষ্ট সচেতন। তাই বাংলাদেশে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক লক্ষ্যসমূহ অর্জন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত সুস্থ জাতি গঠনে হবে একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ।

লেখকঃ  ড. প্রকৌশলী মাসুদা সিদ্দীক রোজী পিইন্জ, এমপি 

মেসেঞ্জার/সজিব