ঢাকা,  শনিবার
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

নেতৃত্বে ব্যর্থতা, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা অনিশ্চিত

আবদুর রহিম, ঢাকা

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৯ জুন ২০২৪

নেতৃত্বে ব্যর্থতা, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা অনিশ্চিত

ছবি : সংগৃহীত

বন্দি থেকে গৃহবন্দি হয়ে হাসপাতালে ধুঁকছেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দলটির অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে খালেদা জিয়া ছয় বছরের বেশি সময় ধরেও রাজনীতিতে আসতে পারেনি। হয়নি উন্নত চিকিৎসা। মেলেনি স্থায়ী জামিন। এমন অভিযোগ দলটির তৃণমুলের। খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলটি। গিয়েছে সংসদেও। এই সবকিছু নেত্রীর মুক্তির জন্য বলেই দাবী ছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, গত ছয় বছর তাঁরা শুধু সরকারের কাছে নেত্রীর মুক্তি চেয়েছে, কিন্তু মুক্তি দিতে বাধ্য করার মতো কোনো কর্মসূচী দিতে পারেনি। গত ১৮ বছরে দলটির ব্যর্থতার যত নথি রয়েছে এখন সবার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার বিষয়টি বড় রয়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারাত্মক জীবন শঙ্কায় রয়েছে খালেদা জিয়া। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে ভবিষ্যতে সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে ফেরা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুঝুঁকিতে খালেদা জিয়ার শরীরে বসানো হয়েছে পেসমেকার। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। যে কোনও সময় মৃত্যুর মতো বড় অঘটনের শঙ্কাও রয়েছে। দলের ভেতরে এমন খবরে ক্ষুব্ধতা তৈরি হয় তৃণমূলে। কর্মসূচী দিতে চাপ দেয়া হলে হাইকমান্ড বাধ্য হয় কর্মসূচী ঘোষণা করতে। আজ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে হবে বড় সমাবেশ।  

অনেক আগে থেকেই তিনি হাঁটার সক্ষমতা হারিয়েছেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে হুইলচেয়ারই তার একমাত্র ভরসা। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারছেন না। এর মধ্যে তার লিভার সিরোসিসও ধরা পড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা দেশের চিকিৎসায় সম্ভব নয়। তার ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ড পরিবারকে ঝুঁকির বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থরাইটিস, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।প্রায় সাড়ে বছর এক কক্ষে বন্দি তিনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। এখন তিনি কারাবন্দি থেকে গৃহবন্দি দাবি দলটির। 

মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলে বলছেন,  অতীতেও দলটির নীতি-নির্ধারকরা কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। কারাগারে নেয়া থেকে দণ্ড এবং বন্দি জীবনে বিএনপির ভূমিকা ছিল একেবারে দুর্বল। সরকারকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা কিংবা ধাক্কা দেয়ার কিছুই করতে পারেনি। শান্ত নীতিতে দীর্ঘ সময় পার। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে খালেদা জিয়া আজ অঘোষিতভাবে রাজনীতি থেকে মাইনাস বলেও অভিযোগ রয়েছে। খালেদা জিয়া এখন বিএনপিতে হারিয়ে গেছেন, একেবারে গুরুত্বহীন বলেও দলের একাংশ থেকে অভিযোগ রয়েছে।কারাগারে নেয়ার পর থেকে প্রতিবাদ করতে পারেনি তেমনি দণ্ড দেয়ার পরও খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির রাজপথে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। রাজপথ বাদ দিয়ে বিএনপি আইনি লড়াইয়ের দিকে গেছে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিএনপির খালেদা জিয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার আজকের এই অবস্থার জন্য দলের নীতি নির্ধারনী ফোরাম দায় এড়াতে পারে না। কারাগারে যাওয়া থেকে এখনো বন্দি কিছুই করতে পারেনি। কখনো বিএনপি বলছে তাঁরা আইনী ভাবে লড়ছেন, আবার কখনো বলছেন বিষয়টি পরিবারের। মুক্তির ব্যাপারে কোনো কার্যত সিদ্ধান্ত আসেনি। এখন তিনি মৃত্যুঝুকিতে রয়েছেন। তাই শেষ সময়ে ব্যর্থতা ঢাকতে কর্মসূচী দেওয়া হচ্ছে। আজ  ২৯ জুন নয়া পল্টনের অফিসের সামনে সমাবেশ । ১ জুলাই সারাদেশে মহানগরগুলোতে সমাবেশ । এরপরে ৩ জুলাই সারাদেশের জেলা সদরে তার মুক্তির দা্বিতে সমাবেশ হবে।”

ব্যর্থতার বিষয় স্বীকার করে একটি কর্মসূচীতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই কিনা সে সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। বিএনপির মতো একটা দল যে আন্দোলন করার যোগ্যতা রাখে সেই আন্দোলন না করলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে না।  ঘরে অনুষ্ঠান করে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। সামাজিক কর্মসূচি কর্মসূচি দিয়ে কারাবন্দি নেতাকে মুক্ত করা যায় না। আমরা নির্বাক তাকিয়ে আছি। খালেদা জিয়ার তো জেলে যাওয়ারই কথা না। আর জেলে যাওয়ার পরও আমরা তাঁর মুক্তির জন্য কার্যকর আন্দোলন করতে পারিনি। তাই তাকে আমরা মুক্ত করতে পারিনি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কাজ হবে না। আজ হোক কাল হোক সরকার পতনের আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির আর কোন বিকল্প পথ নেই।

বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘যখন আমরা স্লোগান দেই ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, তখন আমার স্লোগান দিতে ইচ্ছে করে, খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথে নামি নাই। নামি নাই যখন তাহলে পরের কথাটা আসে কী করে যে, পথে কাঁটা নাই, সেটা কোনো পথই না। সেটা হলো মসৃণ কার্পেট। কার্পেটের ওপরে হেঁটে হেঁটে মজলিসে যাওয়া যায়, মঞ্জিলে যাওয়া যায় না। একত্রিত হয়ে শপথ নিতে হবে, তবেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক স্পিকার ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনিভাবে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার সব ধরনের রাইট ছিল; কিন্তু সরকার কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা করেনি।

মেসেঞ্জার/দিশা

×
Nagad