ঢাকা,  বুধবার
৩০ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি : মির্জা ফখরুল

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৪ জুলাই ২০২৪

আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি : মির্জা ফখরুল

ছবিঃ সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের ওপর জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের দমন-পীড়নে সেই আন্দোলন খানিকটা স্তিমিত হলেও তা শেষ হয়ে যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ তিনি বলেন, ‘এবারের আন্দোলনে সমস্ত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। কোটার দাবিতে আন্দোলন ছিল। সেই সঙ্গে আজকে সর্বক্ষেত্রে সরকারের চরম ব্যর্থতা... সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে আজকে জনগণের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নামিয়ে, দমন-পীড়ন করে তারা (সরকার) হয়তো এটাকে (আন্দোলন) থামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক সমাধান না করা হয়, ততক্ষণ কোনো কিছুরই সমাধান হবে না। সেই রাজনৈতিক সমাধানটা হচ্ছে-সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

সমর্থন জানানোর পর দলের নেতা–কর্মীরা রাজপথে ছিল কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা গায়েবানা জানাজা করেছিলাম। সেখানেও আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হয়েছে, সংঘর্ষ হয়েছে। পরবর্তীকালে আমাদের যে সমাবেশ ছিল প্রেসক্লাবের সামনে, সেই সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা করা হয়েছে। আমাদের দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।’

তবে এই আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নাশকতার মদদ দেওয়ার অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ অমূলক, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে বিএনপি ও এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হেয়প্রতিপন্ন ও তাঁর ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। এ থেকে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় যে, এরা (সরকার) আসলে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলছে না।

তারা শুধু স্থাপনায় আঘাত ও ধ্বংস নিয়ে বলছে, এতগুলো প্রাণ যে চলে গেল, সে বিষয়ে তারা কিছু বলছে না। মূল কথাটা হচ্ছে-তারা (সরকার) আন্দোলনটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়।’

এ প্রসঙ্গে ফখরুল আরও বলেন, ‘আন্দোলনে থাকা আর নাশকতার সঙ্গে থাকা এক না। ৪০ বছরের ইতিহাসে নাই যে, বিএনপি কোনো সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করেছে। নাশকতার মদদ তো দিচ্ছে তারা। তারা চাচ্ছেই নাশকতা হোক।’

এ সময় কোটা আন্দোলনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তথ্য ঠিকমতো পাচ্ছি না। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের অফিসগুলোতে আক্রমণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমার জানামতে দলের প্রায় ২ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী দিনের করণীয় এবং কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা স্থায়ী কমিটির সভা করতে পারিনি। সভা হলে আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় ও কর্মসূচি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

সত্য বলার কারণে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার আছে, এটা এখন সারা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনোরকম দায়বদ্ধতা নেই।

একটা মানুষ (ড. ইউনূস) যিনি আজকে গোটা বিশ্বে সমাদৃত, সত্য বলার কারণে তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী বলা হচ্ছে। অথচ ১৫ বছরে তারা যা করেছে, সবকিছুই জনগণের বিরুদ্ধে গেছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে।’

এদিকে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে এদিন বুধবার এক বিবৃতি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারাবন্দী ও হয়রানির ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

নিত্যপণ্যের মূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি এবং গণবিরোধী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনে জর্জরিত মানুষ আর এক মুহূর্তের জন্যও আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায় না। পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও কারফিউ জারির মাধ্যমে সরকার জনগণের সঙ্গে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। জনগণ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।’

মেসেঞ্জার/তারেক