ছবি : সৌজন্য
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কিছু মানুষ আমাদের ভেতরে ঢুকে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তারা সমাজে এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করছে, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে। তারা যেন আমাদের এ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য সকলকে এসব অনুচরদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফেনীর সোনাগাজী সাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, কিছু মানুষ সংস্কর-সংস্কার বলে সকল প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে। আমাদের দেখতে হবে এটি কোনো ষড়যন্ত্র কিনা। বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করলে দেশের সমস্যা বাড়বে। যত দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, তত দ্রুত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।
বিএনপি ছাড়া আগে কেউ সংস্কারের কথা বলেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সময় স্বৈরাচার অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ধরে রেখেছিল, সেই সময় বিএনপি ছাড়া আর কেউ সংস্কারের কথা বলেনি। শুধুমাত্র এক বিএনপিই বলেছিল। কারণ বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো এ স্বৈরাচার একদিন বিদায় হবে, বাংলাদেশের মাটিতে তাদের পতন ঘটবে।
সামনের দিনে দেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি। সামনের দিনে আমরা জনগণের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করব। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে, তারা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব রকম সহায়তা ও কাজ করবে। তারা জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে আশা করি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যখনই বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়, এমন পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে- যার ফলে দেশ ও দেশের মানুষ আস্তে আস্তে করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আগামীতে যেন বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আবার সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করতে দেখেছি। তাদের মধ্যে কিছু কিছু সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। আজ সরকারের ভেতরে বা বাইরে সরকার বা সংস্কার নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু প্রায় আড়াই বছর আগে আপনাদের প্রিয় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দেশকে গড়ে তোলার জন্য, জনগণকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে ও রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ দফার মাধ্যমে এ কথাগুলো তুলে ধরেছিল।
শেখ হাসিনা সরকারের বিচার দাবি করে তারেক রহমান বলেন, এতো হাজার মানুষের আত্মত্যাগে আজ আমরা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে পেরেছি। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ দলমত নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেই স্বৈরাচার বাংলাদেশের মাটি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজারো মানুষকে হত্যা, জখম ও পঙ্গু করেছে- এসবের জন্য যারা দায়ী, সে মানুষগুলোকে অবশ্যই দেশের আইনে বিচার করতে হবে। বিশেষ করে তাদের যে নেত্রী ৫ আগস্ট পালিয়ে গেছেন তার যদি বিচার না হয়, তাহলে যারা এতো বছর ধরে গুম, খুন ও জখম করেছে তারা ভবিষ্যতে উৎসাহিত হবে।
শহীদ মাসুদকে স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক ও ভোটের যে অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনার জন্যই মোহাম্মদ মাসুদসহ আমাদের হাজারো নেতাকর্মী এতো ত্যাগ শিকার করে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলেন। শুধু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষকে জখম ও পঙ্গু করা হয়েছে। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে।
এর আগে বিকেলে সোনাগাজীতে বিচারবহির্ভুত হত্যার শিকার উপজেলা যুবদল নেতা শহীদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে নতুন ঘর উপহার দেওয়া হয়। নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা, সদস্য সচিবসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মেসেঞ্জার/তুষার