ঢাকা,  শনিবার
১৮ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

নাপোলির সেই ‘কফিহাউজ’ আজ আর নেই

মেসেঞ্জার স্পোর্টস

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

নাপোলির সেই ‘কফিহাউজ’ আজ আর নেই

ছবি : সংগৃহীত

২০২২-২৩ মৌসুমটা ইতালির নেপলস শহর মনে রাখবে বহুদিন ধরে। হয়ত ইতিহাসেরই অংশ হয়ে থাকবে। ইতালির ফুটবলে বরাবরই তারা মধ্যমসারির বলে বিবেচিত। শহরের সবচেয়ে বড় ক্লাব নাপোলি বরাবরই লড়তো ইউরোপিয়ান স্লটের জন্য। প্রত্যাশা ছিল বড় কিছুর। কিন্তু ওই একটা মৌসুম বদলে দেয় সবকিছু। নাইজেরিয়া থেকে ভিক্টর ওসিমেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কিম-মিন জায়ে আর জর্জিয়ার খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া রাতারাতি বদলে দেন সবকিছু। 

ডাগআউটে ছিলেন লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি। টাক মাথার ইতালিয়ান এই কোচ রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম দিলেন পুরো মৌসুমে। দুর্দান্ত ধারাবাহিক একটা দল। নিজেদের সেরা তারকা লরেঞ্জো ইনসিনিয়েকে ছাড়াই এসব তরুণদের নিয়ে বাজিমাত করলো নাপোলি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা পরবর্তী যুগে এলো প্রথম লিগ শিরোপা। 

মৌসুম শেষে ভিক্টর ওসিমেন হলেন বর্ষসেরা স্ট্রাইকার। কিম মিন জায়ের হাতে উঠেছিল বর্ষসেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার। আর খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া পেয়েছিলেন সিরিআ-এর বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মান। স্প্যালেত্তি ছিলেন বর্ষসেরা কোচ। 

কিন্তু ওটুকুই। নাপোলির স্বপ্নযাত্রার সেই সারথিরা একে একে ক্লাব ছেড়েছেন। যার সবশেষ কাভারাৎসখেলিয়া। যাকে ভালোবেসে নেপলস ডেকেছিল ‘কাভারাডোনা’। নামটা ম্যারাডোনা থেকে এসেছে, সেটা আলাদা করে বলার কিছুই নেই। ম্যারাডোনা যেভাবে নাপোলিকে এনে দিয়েছিলেন ইতালিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব, তেমনি করেই কাভারাৎসখেলিয়া এনে দিয়েছেন হারানো দিনের সেই সম্মান। 

কিন্তু নাপোলি মূল্যায়ন করেনি জর্জিয়ার এই তারকাকে। নাপোলির সেরা তারকা হয়েও বেতনের দিক থেকে তিনি ছিলেন ১৪তম। বেতন ইস্যুতেই ক্লাবের সঙ্গে বনেনি কাভারাডোনার। ফলাফল– শীতকালীন দলবদলে তিনি নাম লেখালেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও দলবদলের বিশ্বস্ত সূত্র ফ্যাব্রিজিও রোমানো নিশ্চিত করেছেন এই দলবদলের সত্যতা। 

কাভারাৎসখেলিয়ার বিদায়ে নাপোলির সেই সোনালী স্কোয়াডের আরেকটা তারা সরে গেল নেপলস শহর থেকে। এর আগে সরে গিয়েছিলেন কোচ স্প্যালেত্তি। বর্তমানে ইতালির জাতীয় দলের কোচ তিনি। কিম মিন জায়ে আছেন জার্মানিতে। বায়ার্ন মিউনিখের রক্ষণভাগ সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধে। আর ভিক্টর ওসিমেন সবচেয়ে দুর্ভাগা। সৌদি ফুটবলে আগ্রহী ছিলেন। তবে দলবদল জটিলতায় আপাতত থিতু হয়েছেন তুরস্কের ক্লাব গ্যালাতাসারাইয়ে। 

কাভারাৎসখেলিয়া চলে যাওয়ার পর ২০২২-২৩ মৌসুমে ইতালিয়ান লিগের সেরা তিন খেলোয়াড় এবং সেরা কোচের কেউই আর রইলেন না এই লিগে। স্প্যালেত্তি ছাড়া বাকি সবার জন্যই বড় সত্য, নিজেদের চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না কেউই। 

শুধু এই চারজনই না। নাপোলির দূর্বল বেতনকাঠামোর কারণে বিদায় নিয়েছেন আরও অনেকেই। অ্যালেক্স মেরেত ছাড়া বাকি সব গোলরক্ষক খুঁজে নিয়েছেন নতুন ঠিকানা। লিও ওস্টিগার্ড গিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব স্টেড রেনেতে। আরেক ডিফেন্ডার জানোলি এখন খেলছেন জেনোয়াতে। মিডফিল্ডার পিতর জেলেনস্কি এখন ইন্টার মিলানের। টানগুই এনডম্বেলে খেলছেন ফ্রান্সের আরেক ক্লাব নিসে। এলজিফ এলমাস চলে গিয়েছেন আরবি লাইপজিগে। 

ওসিমেন আর কাভারাৎসখেলিয়ার তারুণ্যকে পূর্ণতা দিয়েছিলেন মেক্সিকোর হার্ভিং লোজানো। অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার এখন খেলেন ডাচ লিগের ক্লাব পিএসভি আইন্দোভেনে। সবমিলিয়ে স্কুডেট্টো জেতা সেই দলের ১৯ জনই এখন আর নাপোলিতে নেই।  

মান্না দে’র কফিহাউজ গানের মতোই নাপোলির সেই সুদিনের সারথীরা একেকজন ছিটকে গিয়েছেন একেকদিকে। কেউ প্যারিসে, কেউ মিউনিখে আবার কেউ তুরস্কে। তবে দুর্দশা ঠিক জেঁকে বসেনি তাদের ওপর। নতুন কোচ অ্যান্তোনিও কন্তে আরেকবার সাজিয়েছেন দলকে। ডেভিড নেরেস, রোমেলু লুকাকু, স্কট ম্যাকটমিনে আর লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলারা এখন পর্যন্ত নাপোলিকে রেখেছেন সিরিআ’র শীর্ষে।

চলতি মৌসুমে নাপোলি ২০ ম্যাচ খেলে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে সবার ওপরে। দুইয়ে থাকা ইন্টার মিলান ১ ম্যাচ কম খেলে পেয়েছে ৪৪ পয়েন্ট। ইন্টার পরের ম্যাচ জিতলেই দুই দলের পয়েন্ট হবে সমানে সমান। মৌসুমের মাঝপথ শেষেও তাই নেপলসের ক্লাবটি আছে শিরোপা জয়ের কক্ষপথেই। কন্তের অধীনে নেরেস, লুকাকুরাও আছেন ছন্দে।  

তবু, নাপোলিকে নিয়ে আলাপ করতে গেলে ওসিমেন, কিম কিংবা কাভারাৎসখেলিয়ারা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। কথা ওঠে লুসিয়ানো স্প্যালেত্তির কোচিং নিয়ে। মৌসুম শেষে দলটা আবার সিরিআ শিরোপা জিততেই পারে। তবু নাপোলির কফিহাউজের আড্ডা ভেঙে যাওয়ার আক্ষেপটাও তাই হয়ত খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক ঠেকে না কখনোই। 

মেসেঞ্জার/তারেক