ছবি : মেসেঞ্জার
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকোমরা গ্রামের গোলাম সরোয়ার ৪৮ তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নৌ বাহিনীর হয়ে শটপুটে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন। গত বছরে নিজের গড়া রেকর্ড এবার নিজেই ভেঙেছেন। গোলাম সরোয়ার মাটিকোমরা গ্রামের আব্দুস সালাম ও হামিদা বেগমের পুত্র। তার নানার বাড়ি নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। অধিকাংশ সময় সে নানার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করত।
বুধবার দেশের জাতীয় অ্যাথলেটিকসের জমকালো আসরের সমাপ্তি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতায় গোলাম সরোয়ার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে শটপুটে অংশ গ্রহণ করেন এবং সর্বোচ্চ ১৫.৫০ মিটার ছুটে তিনি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছুড়ার রেকর্ড গড়েন। গত বছর গোলাম সরোয়ার ছুড়েছিলেন ১৪.৮৯ মিটার। এবার তার নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙে ছুড়েছেন ১৫.৫০ মিটার। ২০১৮ সালে শটপুটে সর্বোচ্চ ১৪.৫৩ মিটার ছুড়েছিল মো. ইব্রাহিম হোসেন। তিনি ১৯৯৬ সালে মো. মোজাফ্ফর হোসেনের ১৪.২৫ মিটার ছুড়ার ২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিলেন।
ছোট থেকে গোলাম সরোয়ারের খেলাধুলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল সহ সকল খেলায় সে পারদর্শী ছিল। গোলাম সরোয়ার বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। এক সময় যশোরের রাইজিং স্টার ক্লাবের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন।
যশোর প্রথম বিভাগ লিগে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ঢাকায় খেলার সুযোগ মিলেছিল তার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকায় তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেন ইস্ট এন্ড ক্লাবে। কিন্তু গোলাম সরোয়ারের নিয়তি যে লেখা অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে!
তাইতো ক্রিকেটের ২২ গজ ছেড়ে নিয়মিত অ্যাথলেটিকসের ফিল্ডে দেখা মেলে শটপুট হাতে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নৌ বাহিনীর হয়ে শটপুটে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন গ্রাম থেকে ওঠা গোলাম সরোয়ার।
গোলাম সরোয়ার ক্রিকেটে ছিলেন পেস বোলার। মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে বড় ক্লাবে খেলার সুযোগ পাওয়াটা কঠিন ছিল তার জন্য। যে ক্লাবে খেলেছেন সেখানে নিয়মিত একাদশে থাকার সুযোগও মিলছিল না। তাছাড়া পরিবার থেকে ক্রিকেট খেলাকে সমর্থন করতো না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতেই পেয়ে যান বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর চাকরি।
মফস্বলে বেড়ে ওঠা গোলাম সরোয়ারের পরিবার সরকারি চাকরিকেই প্রাধান্য দিতে বলেন তাকে। এজন্য ২০১২ সালে নৌ বাহিনীতে চাকরি হতেই প্রিয় ক্রিকেটকে জানিয়ে দেন বিদায়।
ভাগ্যক্রমে অ্যাথলেট হয়ে ওঠা গোলাম সরোয়ারের। ঘটনাটি নিজেই বলেছেন, সৈনিকদের মনোবল বাড়াতে আন্তঃঘাটিতে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। শটপুটে ৯ মিটারের ওপর স্কোর করি। এই পারফরম্যান্স দেখে নৌ বাহিনী ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডে আনা হয় আমাকে। সেখান থেকেই এই খেলাটার শুরু হয়।
মূলত প্রতিযোগিতার জন্য শটপুটে হাতেখড়ি ২০১৪ সালে। ১ বছর অনুশীলন করে প্রথমবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নেন ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৯ সালে জাতীয় সামার মিটে জেতেন রুপার পদক। কিন্তু ওই বছরই জাতিসংঘ মিশনে দক্ষিণ সুদান যেতে হয় সরোয়ারকে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলাতে বিরতি পড়ে। মিশন শেষে দেশে ফেরেন ২০২০ সালে। ফিরে ২০২২ সালে সামার মিটে অংশ নিয়েই জেতেন সোনা। সেবার স্কোর করেন ১৪.২৩ মিটার। ওই বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্যই ১৩.৮৬ মিটার দূরত্বে গোলক ছুঁড়ে রুপা জেতেন। ২০২৪ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে দেশের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ১৪.৮৯ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন। এরপর ৪৮ তম আসরে করলেন ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। ১৫.৫০ মিটার ছুঁড়ে গত বছরে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে জিতলেন সোনা। গোলাম সরোয়ারের এবার লক্ষ্য দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জিতে আনা। সেজন্য সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে।
গোলাম সরোয়ারের আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড সালভেজের (সোয়াডস) সদস্য। ২০১৩ সালে করেছেন সীল কমান্ডো কোর্স। যারা স্থল, জল ও আকাশে সমানভাবে নিরাপত্তায় পারদর্শী।
গোলাম সরোয়ার আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু আপাতত শুধু খেলাতেই মনোযোগ, অনুশীলনে সময় বেশি ব্যয় করেন। এজন্য বিশেষায়িত ফোর্সের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে না।
জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সেরা হওয়ার পর এখন গোলাম সরোয়ারের মতো অ্যাথলেটদের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী উন্নত প্রশিক্ষণ। তাহলে হয়তো এদের হাত ধরেই বাংলাদেশ পেতে পারে অবহেলিত ইভেন্টগুলোতে আন্তর্জাতিক পদক।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর থ্রো ইভেন্টের কোচ আনছার আহমেদের অক্লান্ড পরিশ্রমের ফসল আজকের গোলাম সরোয়ার। এই অর্জনে কোচ আনছার আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গোলাম সরোয়ার।
মেসেঞ্জার/তুষার
